11/11/2024 : Monday
Trip No.: - 4আশা করি তোমরা আমার আগের সপ্তাহের বোলপুরের Blog টা সকলেই পড়েছো। সেদিন বলেছিলাম বোলপুরের সোনাঝুরির দিক টা ঘুরতে আবার একদিন আসবো। আজ আবার আমার সাধের বাহন - Dio 125 নিয়ে বোলপুর চলে এলাম। আগের সপ্তাহের বোলপুরের tour টা সত্যিই দারুন হয়েছিল।
আগের দিনের মত আজ ও সকাল ৭ টায় বেরিয়েছিলাম, একই রাস্তা দিয়ে এলাম। আজও সেই সর্বমঙ্গলা মিস্টান্ন ভান্ডার থেকে কচুরি - ঘুগনি খেয়েছিলাম।
Google map দেখে সকাল ৯:১৫ তে পৌঁছে গেলাম আজকের প্রথম গন্তব্য - প্রকৃতি ভবন।
প্রকৃতি ভবন - Nature Art Museum
Main gate -এর বাইরে গাড়ি রেখে (Free parking) ভিতরে প্রবেশ করেই বাম দিকে ticket counter. Entry fees Rs.30/- and Photography fees Rs. 20/-. টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
এটি সোনাঝুরি হাটের কাছেই বল্লভপুর এলাকায় অবস্থিত। এটি মূলত একটি Museum বা সংগ্রহশালা যা ৪ টি গ্যালারিতে বিভক্ত, যেখানে গাছের গুঁড়ি, গাছের ডাল, কাঠ এবং বিভিন্ন ধাতু নির্মিত বিভিন্ন ভাস্কর্য খুব সুন্দরভাবে সজ্জিত আছে। প্রতিটি গ্যালারিতে বাইরে জুতো খুলে প্রবেশ করতে হয়। এই ভাস্কর্যের মধ্যে বেশিরভাগ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। গ্যালারি-র বাইরে সুন্দর সবুজ ঘাস যুক্ত মাঠ সেখানেও বিভিন্ন প্রতিকৃতি সাজানো রয়েছে। Museum-এর কিছু ছবি নিচে দিলাম।
সোনাঝুরি হাট ও সোনাঝুরি ফরেস্ট
প্রকৃতি ভবন থেকে বেরিয়ে সামনের রাস্তা ধরে সামান্য একটু (1KM) এগিয়ে গেলেই সোনাঝুরি ফরেস্ট ও সোনাঝুরি হাট। সোনাঝুরি ফরেস্ট হলো সোনাঝুরি গাছ দিয়ে আবৃত একটি বড় মাঠ এবং পাশেই সোনাঝুরি হাট। সোনাঝুরি হাট ও সোনাঝুরি গাছ দিয়ে ঘেরা একটি বড়ো মাঠ যেখানে গাছ এর নিচে নিচে কাছাকাছি গ্রামের কারিগররা তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করে, পোড়ামাটির মৃৎশিল্প, ডোকরা ধাতুর কারুশিল্প, হাতে বোনা বস্ত্র, চামড়ার পণ্য এবং বাটিক ও কাঁথার কাজ সহ বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র অফার করে। সোনাঝুরি হাট তার হস্তনির্মিত কারুশিল্প এবং শিল্পকর্মের বিস্তৃত পরিসরের জন্য বিখ্যাত।
সোনাঝুরি হাট একটি বিশাল এলাকা যেখানে তোমরা ২০০+ দোকান পাবে, যেখানে মানুষ ছবি, পোশাক, গয়না, গৃহসজ্জার সামগ্রী এবং আরও অনেক কিছু বিক্রি করে। দাম খুবই reasonable এবং তোমরা কিছুটা দর কষাকষি করে দাম কমাতেও সক্ষম হবে।
সংক্ষেপে, যারা কেনাকাটা করতে পছন্দ করো তাদের জন্য এটি একটি স্বর্গরাজ্য। পোশাকগুলি মূলত বীরভূম জেলায় পাওয়া যায় এমন প্রিন্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং গয়নাগুলি হস্তনির্মিত, তামা, রূপা, অক্সিডাইজড ইত্যাদি।
এগুলি ছাড়াও, তোমরা জুস, চা, কফি, আইসক্রিম ইত্যাদির মতো খাবারের জিনিসও পাবে।
সোনাঝুরি হাটের পাশেই একটি ফাঁকা জায়গায় সুন্দর পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে (Free parking)। কিন্তু সকালের দিকে খুব একটা ভিড় না থাকায় হাটের সামনেই গাড়ি রেখে ভিতরে প্রবেশ করলাম। পুরো হাটের একটি ভিডিও করেছি যেটা নিচে দিলাম। আমি দুটি কুর্তা (২০০ টাকা করে) কিনলাম এখান থেকে।
Amkhoi Wood Fossil Park via Ilambazar forest road
সোনাঝুরি হাট থেকে বের হয়ে এবার যাচ্ছি ইলামবাজার জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে Amkhoi Wood Fossil Park. ইলামবাজার জঙ্গলের ভিতরে একটি ছোট্ট গ্রাম আমখই। ইলামবাজার জঙ্গলের রাস্তা টি খুব ই সুন্দর। রাস্তার দুপাশের গাছ পরস্পরের সাথে মিশে ছাতার মত আবরণ তৈরী করেছে আর তার পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে। এই রাস্তায় driving টা আজকের সেরা মুহূর্ত ছিল। সেই রাস্তার একটি ভিডিও নিচে দিলাম দেখে নাও।
আমখই গ্রামে যখন পৌঁছালাম ফসিল পার্কের সামনেই একটা বড়ো বটগাছ দেখতে পেলাম যার নিচে বসার জায়গা করা রয়েছে। গ্রামটি ছোট হতে পারে কিন্তু ছবির মতো সুন্দর। সেই বটগাছের নিচে একটু বসলাম, খুব ভালো লাগছিল গ্রামের অতসুন্দর পরিবেশ, দেখলাম একটি গরুর গাড়ি খড় বোঝাই করে নিয়ে চলেছে। গ্রামের বাড়িগুলির দেওয়ালের নকশা দেখে সৃজনী শিল্পগ্রামের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।
Wood Fossil Park-এর প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। ওই বটগাছের নিচে গাড়ি রেখে টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভিতর টা পার্কের মতোই সাজানো। চারিদিকে বিভিন্ন Fossils রাখা রয়েছে। পুরো পার্কটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। Wood Fossil Park-এর কিছু ছবি নিচে দিলাম দেখে নাও তোমরা।
Amkhoi Fossil park থেকে যখন বেরোলাম অল্প অল্প খিদে পাচ্ছিল কিন্তু এখনো lunch-এর সময় হয়নি। এই দুপুর ১২ টা বাজছে। আর আজ কিন্তু lunch বোলপুরে করব না। আপাতত অল্প কিছু খেতে হবে। চলে গেলাম সেই বোলপুরের আমার favourite - Ghore Baire Restaurant. নিলাম এক প্লেট চিকেন পকোড়া আর cold drink (200ml pet bottle).
খাওয়ার পর দেখলাম আপাতত পেট ভোরে গেলো এবং lunch ২ টোর দিকে করলেই হবে। দিয়ে চলে গেলাম আবার শ্রীনিকেতন রোডে সৃজনী শিল্পগ্রাম (আগের বোলপুর tour-এই এখানে এসেছিলাম আর সেটা তোমরা আসা করি পড়েছো)। এটা কিন্তু আজকের প্ল্যানে ছিল না যদিও। ওখানে একটু সেই পুকুর পাড়ে বসলাম একটু ঘুরলাম। ওখানে ৩০ মিনিটের মতো সময় কাটিয়ে এবার যাচ্ছি গুসকরা পেরিয়ে ওড়গ্রামে সেই "হোটেল খোয়াই"। এখানে এখন lunch করব।
এখন ঘড়িতে বাজে দুপুর ২ টো। আমি হোটেল খোয়াইয়ে এসেই order করে দিয়েছি Veg Thali আর কাতলা কালিয়া। এখানে Thali তে ভাত, ডাল, তরকারি সবই unlimited. খুবই সুস্বাদু খাবার। পেট ভরে খেয়ে ওখানে একটু বসলাম ভিতরে খুব সুন্দর বাগান আছে, ঘুরে ঘুরে সব দেখছিলাম । ২:৪৫ -এ ওখান থেকে বেরিয়ে গেলাম এবং বাড়ি চলে এলাম বিকাল ৪ টার কিছু আগেই।
আগের দিনের মতোই আজকের tour টাও বেশ সুন্দর হল। খাওয়াদাওয়াও ভালোই হল। কিন্তু ওই ভেদিয়া underpass-এর অবস্থা খুব খারাপ। আজ জল ছিল না কিন্তু ওই রাস্তা ভেঙে বড়ো বড়ো রড বেরিয়ে আছে যেগুলি খুবই বিপদজনক।