11/12/2024 : Wednesday
Trip No.: - 8গত অক্টোবর মাসে "বহুরূপী" বলে একটা বাংলা সিনেমা release করেছিল, যেখানে এই অন্নপূর্ণা মন্দিরটি প্রথম দেখতে পাই। "বহুরূপী" সিনেমার শেষের দিকের একটি অংশ এখানে শুটিং হয়েছিল। সিনেমাটি প্রথম দেখে মনে হয়েছিল দক্ষিনেশ্বর মন্দির কিন্তু পরে জানলাম ঠিক ওই একই রকম দেখতে এই মন্দিরটি হল অন্নপূর্ণা মন্দির। তখনই মনে হল এখানে একদিন যেতেই হবে আর পাশেই আছে "দাদা বৌদি হোটেল" যেখানে বিরিয়ানি খাওয়ার আমার কতদিনের ইচ্ছা। তারপর detail study করে এই মন্দির টি সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জেনে নিলাম।
আজ সকাল ৬ টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে (বর্ধমান থেকে) বেরোনোর সময় দেখলাম কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। সমস্যা শুরু হলো গাংপুর পেরোনোর পর থেকে। প্রচুর কুয়াশা। সামনে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। আমি night vision glass পড়েছিলাম, কিছুটা visibility বারলেও চশমায় জল হয়ে যাচ্ছে, কিছুটা যাচ্ছি আর দাঁড়িয়ে চশমার জল মুছছি। একবার ভাবলাম দাঁড়াতে হবে, কিন্তু দাঁড়ালে শুধু শুধু সময় নষ্ট হবে, যেতে দেরি হবে। Time management সম্পর্কে আমি খুব punctual. এভাবেই এগোতে থাকলাম।
রসুলপুর থেকে যখন মেমারী রাস্তা ধরলাম সমস্যা আরো বাড়ল। রাস্তায় divider নেই। এতক্ষন তো one way road ছিল। এবার উল্টোদিক থেকে আসা গাড়িও দেখতে পাচ্ছিনা। কুয়াশা আরো কিছুটা বাড়ল। মানে একেবারে zero visibility. T-shirt এর উপর wind-cheater পড়েছিলাম। কিন্তু কুয়াশার জলে অনেকটা ভিজে গেছি, অসম্ভব শীত করছে, হাতগুলোর কোনো sense নেই। মেমারী পার করে একটা চায়ের দোকানে দাঁড়ালাম। একটা চা নিলাম, কিন্তু হাত ঠান্ডায় এমন কাঁপছিলো চা টা হাতের উপরেই পড়ে গেল। গরম চা হাতে পড়ে গেল কিছু টেরই পেলাম না। হাতটা জলে ধুয়ে আবার চা নিলাম, চা খাওয়ার পর কিছুটা energy পেলাম।
এরপর যত এগোতে লাগলাম কুয়াশা যেন আরো বাড়তে লাগল। মাঝে মাঝে সামান্য কম আবার মাঝে মাঝে কুয়াশা মেঘের মত এসে পুরো ভিজিয়ে দিচ্ছে, আর এই শীতের সকালে ভিজে শরীরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি। পাণ্ডুয়া পেরিয়ে এক জায়গায় দাঁড়ালাম, খিদেও পেয়েছিল, পরোটা আর ঘুগনি খেলাম। ঘড়িতে এখন সময় সকাল ৯ টা। পুরো শরীর ভিজে গেছে, জামা প্যান্ট সব ভিজে, সাইট অসম্ভব কাঁপুনি হচ্ছে। আবার গাড়ি চালাতে শুরু করলাম, রীতিমত টলমল করছি এবার, এতো কাঁপুনি হচ্ছে। কিন্তু আমিও হার মানব না। এটাই তো adventure.
এরপর সকাল ৯:৪৫ যখন বাজে কল্যাণী এসে পৌঁছালাম। দেখলাম এবার কুয়াশা কমে যাচ্ছে। সূর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। এবার Kalyani Expressway ধরে ব্যারাকপুরের দিকে এগোচ্ছি। জামা প্যান্ট আস্তে আস্তে শুকোচ্ছে। এই ভয়াবহ কুয়াশার মধ্যে driving-এর অভিজ্ঞতা সারা জীবন মনে থাকবে।
ঘড়িতে এখন সময় সকাল ১০:৩০ মিনিট। আমি চলে এসেছি টিটাগড়ের অন্নপূর্ণা মন্দিরে। গেটের বাইরে parking place-এ গাড়ি park করে ভিতরে প্রবেশ করলাম। কুয়াশা কেটে সবে সূর্যের আলো দেখা গেছে। পায়রা উড়ছে। অন্নপূর্ণা মন্দিরের এই সকালের অপূর্ব শোভা দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম যে ভুলেই গেলাম আসার রাস্তার ওই ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা।
এই মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে কয়েকটি কথা একটু বলে দিই।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর-টিটাগড় অঞ্চলের দক্ষিনেশ্বর কালীবাড়ির অনুরূপ এই সুপ্রসিদ্ধ অন্নপূর্ণা মন্দিরটি ১৮৭৫ সালে দক্ষিনেশ্বর কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রানী রাসমণির কনিষ্ঠা কন্যা জগদম্বা দেবী প্রতিষ্ঠা করেন।
মন্দিরের নিকটবর্তী প্রাচীন ঘাটটিতে জগদম্বা দেবী প্রথম এসেছিলেন ১৮৭১-৭২ সালে। জগদম্বা দেবীর স্বামী মথুরানাথ বিশ্বাস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তৎকালীন চিফ ইঞ্জিনিয়ার সি বি স্লেওয়ার্টের এস্টেটের জমি থেকে বর্তমান মন্দিরের ভূখণ্ডটি তার চার পুত্রের নামে ক্রয় করেন। মথুরবাবুর মৃত্যুর পর জগদম্বা দেবী পুত্রদের কাছ থেকে দানপত্রের মাধ্যমে সেবাইতরূপে এই জমির উত্তরাধিকারিণী হন। এই জমিতে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তার ইচ্ছায় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। তারপর অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও অর্থব্যয়ে নির্মিত এই মন্দিরে দেবীপ্রতিষ্ঠা হয় ১৮৭৫ সালের ১২ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তির দিন।
জানা যায়, মন্দিরের সিংহদ্বারের উপর একটি সিংহমূর্তির স্থাপনা নিয়ে ব্রিটিশ সরকার মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আইনি দ্বন্দ্ব্বে জড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রতীক সিংহ তারা নেটিভদের নিজস্ব মন্দিরে সংযোজন মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আদালত রায় দিয়েছিলেন, সিংহ বিক্রমের প্রতীকরূপে যে কেউ গ্রহণ করতে পারে।
পূর্বদিকের প্রধান প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করেই দেখলাম জগদম্বা দেবীর একটি মূর্তি করা রয়েছে। ডানদিকে মূলমন্দির (নবরত্ন মন্দির) এবং বামদিকে একটি নাটমন্দির। তারপর রয়েছে ৬ টি আটচালা শিবমন্দির। এবং মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বার দিয়ে বের হয়ে সামনের দিকে গেলে সুদৃশ্য গঙ্গার ঘাট যার নাম - রাসমণি ঘাট। মূলমন্দিরের পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সিঁড়ি রয়েছে। মূল মন্দিরে রয়েছে সাদা পাথরের উপর রুপার সিংহাসনে দেবী অন্নপূর্ণার অষ্টধাতুর মূর্তি এবং মহাদেবের রুপার মূর্তি। ছয়টি শিব মন্দির কল্যাণেশ্বর, কাম্বেশ্বর, কিন্নরেশ্বর, কেদেরেশ্বর, কৈলেশ্বর এবং কপিলেশ্বরকে উত্সর্গীকৃত। নাটমন্দিরের পূর্বদিকে পায়রার জন্য কাঠের ছোট ছোট ঘর করা রয়েছে।
আমি প্রথমেই রাসমণি ঘটে গেলাম সেখানে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে এসে শিবমন্দির গুলি দর্শন করলাম। তারপর মূলমন্দিরে দক্ষিণ দিকের সিঁড়ি দিয়ে উঠে গিয়ে দেবী অন্নপূর্ণা কে দর্শন করে এসে সামনের নাটমন্দিরে বসলাম। ভিতরে দেখলাম পুজোর জোগাড় চলছে। এই সেই নাটমন্দির যেখানে "বহুরূপী" সিনেমার শেষের দিকে কিছুটা অংশ শুটিং হয়েছিল। এতো শান্ত এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশ যে এই নাটমন্দিরে বসে থাকতে থাকতে কখন যে দুপুর ১২:৩০ বেজে গেছে বুঝতেই পারি নাই। এবার উঠতে হবে।

আমি এখন যাচ্ছি অন্নপূর্ণা মন্দির থেকে মাত্র ২.৫ কিমি দূরে "দাদা বৌদি হোটেল", যা বিরিয়ানির জন্য বিখ্যাত সেটা তো তোমরা সবাই জানো। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল এখানে বিরিয়ানি খাওয়ার।
দাদা বৌদি হোটেলের সামনে পৌঁছে দেখলাম একেবারে রাস্তার ধরে restaurant, parking-এর কোনো ব্যবস্থা নেই। পাশেই একটা building construction হচ্ছে, সেখানে scooty টা park করলাম।
আমি দুই প্লেট "Special Mutton Biryani" পার্সেল নিয়ে নিলাম। বাড়ি গিয়েই খাবো। এরপর ব্যারাকপুর থেকে বেরিয়ে গেলাম। Kalyani Expressway-তে ওঠার পর একটা JIO Petrol pump দেখতে পেলাম, সেখানে অল্প গাড়িতে petrol ভরে নিয়ে কল্যাণী expressway ধরে একেবারে পৌছালাম মগরা। সেখানে একবার দাঁড়িয়ে সামান্য কেক, বিস্কুট খেয়ে নিলাম। তারপর মগরা ব্রিজ পেরিয়ে বামদিকে গুড়াপ যাওয়ার রাস্তা ধরলাম। এই রাস্তা টি বেশ ভালো এবং ফাঁকা রাস্তা। গুড়াপ থেকে G. T. road ধরে একেবারে বাড়ি চলে এলাম।
যাওয়ার সময় কুয়াশার জন্য অনেক সময় লেগেছিল। এখন বাজছে ৩:৩০। আমি এইমাত্র বাড়ি ঢুকলাম। যাওয়ার সময় অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি তো এখন জমিয়ে দাদা - বৌদির Special Mutton Biryani খাবো। তোমরা আমার বাকি গল্পগুলি এখনো না পড়ে থাকলে ঝটপট পরে ফেলো। খুব তাড়াতাড়ি আবার নতুন Tour-এর গল্প নিয়ে আসছি। Keep visiting.