01/11/2024 : Friday
Trip No.: - 3ওড়গ্রাম যেদিন গেছিলাম সেদিন ই বোলপুরের কথা মাথায় এসেছিল। তাই ওড়গ্রাম থেকে ফিরে একটা বোলপুরের special trip plan করছিলাম। এর আগে বোলপুর গেছি অনেকবার কিন্তু ট্রেন - এ। রবীন্দ্র মিউজিয়াম দেখে গেছি, পৌষ মেলাও দেখে গেছি।
কিন্তু এবার যেহেতু special trip, প্রথমবার নিজে ড্রাইভ করে একা যাচ্ছি বোলপুর , এবার বোলপুর টা একটু অন্যরকম ভাবে ঘুরব। ২ সপ্তাহ আগে ওড়গ্রাম থেকে ঘুরে এসে এই বোলপুর ট্রিপের plan করা শুরু করেছিলাম।
আজ একটু অন্যরকম excitement কাজ করছিল। ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলাম। চা - বিস্কুট খেতে খেতে সমস্ত Plan & Details একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। গুগল ম্যাপ এ Street view টাও আর একবার দেখে নিলাম। Facebook-এ LDFK Group-এ দেখেছিলাম ভেদিয়া unbderpass-এ জল জমে আছে এবং রাস্তা খারাপ।
Plan অনুযায়ী সকাল ৭ টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। বর্ধমান থেকে নাবাবহাট হয়ে গুসকরা রোড ধরে যাচ্ছিলাম। সকাল বেলায় গাড়ি চালানোর মজাই আলাদা। গুসকরা মোড় থেকে সামান্য এগিয়ে বাম দিকে একটি মিষ্টির দোকানে দাঁড়ালাম (সর্বমঙ্গলা মিষ্টান্ন ভান্ডার)। এখানে কচুরি ও ঘুগনি খেলাম। কচুরিগুলো সত্যিই অসাধারণ ছিল, 6/- per piece.
এরপর খেয়ে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে Google Map দেখে একবারে পৌঁছে গেলাম আজকের প্রথম গন্তব্য - সৃজনী শিল্পগ্রাম।

সৃজনী শিল্পগ্রাম
সকাল ৯:৩০ -এর কিছু আগে এখানে পৌঁছে Main gate-এর বামপাশে Free parking-এ গাড়ি রেখে gate-এ প্রবেশ করার পর বাম দিকে Ticket counter. প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
ভারতের প্রতিটি রাজ্যের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক থিম দ্বারা বেষ্টিত প্রকৃতির কোলে এটি একটি সুরক্ষিত শান্তিপূর্ণ স্থান। বিভিন্ন ভাস্কর্য এবং শিল্পকলা সত্যিই দেখার মত। ভালো ভালো হস্তশিল্পের জিনিসপত্র যেমন বিভিন্ন পোশাক, ব্যাগ ইত্যাদি বিক্রিও হচ্ছিল।
মাঝখানে একটি বড় পুকুর আছে যার চারিদিক গাছ দিয়ে ঘেরা, পুকুরে হাঁস চড়ে বেড়াচ্ছে, পুকুরের চারিদিকে বসার জায়গাও করা রয়েছে। পাশে একজন খুব সুন্দর বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। এই সুন্দর পরিবেশে পুকুরের পারে গাছের ছায়ায় বসে বাঁশি শুনতে শুনতে কিভাবে যে এক ঘন্টা কেটে গেলো বুঝতেও পারলাম না। সকালের দিকে ভিড় ও ছিল না ঠিক যেরকম আমি নির্জন পরিবেশ পছন্দ করি।
এতো সুন্দর জায়গা থেকে বেরোতে ইচ্ছা না করলেও সময়ের বাধ্যবাধকতায় বেরোতেই হলো কারণ এখনো তিনটি জায়গায় যেতে হবে।
Ballavpur Wildlife Sanctuary and Deer Park
সৃজনী শিল্পগ্রাম থেকে বেরিয়ে Google Map দেখে পৌঁছে গেলাম আজকের দ্বিতীয় গন্তব্য Ballavpur Wildlife Sanctuary, যা Deer Park নামেও পরিচিত। এখানে পৌঁছে গেটের বাইরে Parking (Paid)-এ গাড়ি রাখলাম। পার্কিং চার্জ ১০ টাকা। টিকিট কাউন্টার থেকে Entry টিকিট কাটলাম। Entry fee ১০০ টাকা, যা আমার একটু বেশি বলেই মনে হল।
চারিদিক গাছপালা বেষ্টিত খুব সুন্দর পরিবেশ। মাঝখানে একজায়গায় সুবৃহৎ মাছের Aquarium দেখলাম, যা খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। বেশ অনেকগুলিই হরিণ রয়েছে। একজন কর্মী হরিণদের খাবার দিচ্ছিলেন। পুরোটা ঘুরে যথাসময়ে বের হলাম পরের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
সুরুল রাজবাড়ি
Deer Park থেকে বেরিয়ে Google Map দেখে পৌঁছে গেলাম আজকের তৃতীয় গন্তব্য সুরুল রাজবাড়ি। এখানে ঢোকার মুখে কিছুটা রাস্তা খুবই সংকীর্ণ। যাইহোক রাজবাড়ি গেটের সামনে অনেক জায়গা আছে Parking-এর জন্য। Free parking. আমার গাড়ি Park করে ভিতরে প্রবেশ করলাম। প্রবেশমূল্য ১০ টাকা।

এটি সুরুল সরকারবাড়ি বা সুরুল জমিদারবাড়ি নামেও পরিচিত। এখানে আসার উপযুক্ত সময় হল দুর্গাপূজার সময়। দেখলাম এই বছর পুজোর আগে নতুন রং করা হয়েছে। প্রায় তিন শতাব্দী পূর্বে শ্রীনিবাস সরকার নাম একজন ব্যবসায়ী এই বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। শ্রীনিবাস সরকারের শুরু করা দুর্গাপূজা ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পরের বছর দুর্গাপুজোর সময় অবসসই একবার সময় করে আসতে হবে।
কোপাই নদী
সুরুল থেকে বেরিয়ে Google map দেখে প্রান্তিক স্টেশনের পাশ দিয়ে প্রান্তিক পেরিয়ে চলে এলাম কোপাই নদী দেখতে। আজকের শেষ গন্তব্য এই কোপাই নদী। যানবাহনের কোলাহল থেকে দূরে খুবই শান্তিপূর্ণ এবং মনোরম এক পরিবেশ এই কোপাই নদীর তীর।
নদীর ধারে গাছপালায় পূর্ন মাঠটি খুব সুন্দর জায়গা। সেখানেই গাড়ি রাখলাম ও গাড়ির উপর ৩০ মিনিট মতো বসে প্রকৃতির এই অপূর্ব মধ্যাহ্নকালীন নির্জনতা ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকলাম যা, আজকের trip-এর সেরা পাওনা। অনতিদূরে কয়েকজন কে নদীতে মাছ ধরতে দেখলাম এবং কয়েকজন গ্রামের ছেলে নদীর জলে স্নান করছিল।
আজকের মতো বোলপুর ঘোরা এখানেই শেষ। আবার কয়েকদিন পর বোলপুর আসব, সোনাঝুরি ও ইলামবাজার এর দিকে যাবো।
এখন ঘড়িতে সময় দুপুর ১:৩০ । খুব খিদে পেয়েছে। এবার lunch করতে হবে। ওখান থেকে চলে গেলাম আমার বোলপুরের favourite restaurant - Ghore Baire Restauranrt, যা গীতাঞ্জলি সিনেমা হলের ঠিক পাশেই। সেই ২০১৯ এ পৌষমেলার সময় খেয়ে গেছি, অনেক পরিবর্তন হয়েছে দেখলাম। আমি order করেছিলাম Mutton Thali আর Tata Copper Plus Mineral Water. এখানে খাবারের quality যে অসাধারণ সেটা আর আলাদা করে বলতে হবে না। Thali তে rice unlimited. খাওয়াদাওয়া বেশ জমিয়েই হলো, শুধু Mutton-এর piece গুলো একটু ছোট ছিল আর Price একটু high বলে মনে হলো। (Mutton Thali : 475/-).
এবার বাড়ি ফেরার পালা। রওনা দিলাম বাড়ির পথে। এখন সমস্যা হলো - প্রচুর খাওয়া হয়ে গেছে পেট পুরো ভর্তি, ভালো খাবার পেলে যেটা আমার এমনিতেই হয় আর কি 🤣🤣🤣। গাড়ি চলাতে একটু অসুবিধা হচ্ছিল। গুসকরা তে রাস্তার ধারেই একটি বড় গাছের ছায়াতে একটি বন্ধ চায়ের দোকানের বেঞ্চে কিছুক্ষন বসলাম। ১৫ মিনিটের মতো বিশ্রাম নিয়ে আবার যেতে শুরু করলাম।
ওড়গ্রাম পৌঁছে হোটেল খোয়াই -এ একবার ঢুকলাম। ১০ টাকা দিয়ে একটা cold drink (Campa) নিলাম। Cold Drink পান করে তারপর বাড়ি চলে এলাম।
আজকের টা বেশ ভালোই হল। তারসাথে খাওয়াদাওয়া ও বেশ ভালোই হল। রাস্তা ও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু ভেদিয়া underpass -অবস্থা খুব খারাপ। জল দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তা ভেঙে গেছে। বোরো বোরো রড বেরিয়ে আছে যা খুব risky.