28/04/2025 : Monday
Trip No.: - 24এর আগের trip-এ যখন রাখাল রাজা মন্দির গিয়েছিলাম ফেরার সময় রসুলপুরে আমার এক বন্ধু ভাস্করের বাড়ি গিয়েছিলাম দুপুরে lunch করতে। সেইদিন ওর কাছ থেকেই এই জায়গাটার নাম জানতে পারি। ছবি দেখে বেশ সুন্দর photographic place বলে মনে হয়েছিল। বাড়ি এসে এই জায়গা নিয়ে যখন study করতে বসি, জানতে পারি, সিনেমাসূত্রে এই জায়গা টি খুবই জনপ্রিয়। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত "ঘরে বাইরে" সিনেমার পুরো শুটিং এই বাড়ি জুড়ে। দেব অভিনীত সিনেমা "গোলন্দাজ", "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনি" সিনেমাতে মুস্কান জেভিরির বাড়ির দৃশ্য, "ফেলুদা ফেরত" web series, "রুদ্রবীণার অভিশাপ" web series এই বাগানবাড়িতেই শুটিং হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় জামালপুর ব্লকের একটি গ্রাম হল চকদিঘি। চকদিঘির এই যে বাগানবাড়ি বা বাগানবাটী (যাকে অনেকে চকদিঘি রাজবাড়ীও বলে থাকে), তাকে নিছক একটি বাগানবাড়ি ভাবলে ভুল ভাবা হয়; এই বাগানবাড়ির সাথে জড়িয়ে আছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, লর্ড কার্জন, সত্যজিৎ রায় সহ বহু মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতি।
প্রথমে ঠিক করেছিলাম এই tour টা অক্টোবর মাসে করব, এর পাশে আর একটি জায়গা আছে দামোদর ও মুণ্ডেস্বরী নদীর মিলনস্থল এই দুটি tour একসাথে অক্টোবরেই করার plan ছিল। এখন ব্যাপার হচ্ছে, এই বাগানবাড়ি টি আমার স্কুলের খুব কাছেই। আমার স্কুল থেকে ১৮ কিলোমিটারের মধ্যে। তাই দুদিন ধরেই মনে হচ্ছিল স্কুল থেকে কোনো একদিন বিকালের দিকে এই বাগানবাড়ি তে ঘুরে এলে হতো।
আজ তাই স্কুলে টিফিনের পর half-day leave নিয়ে দুপুর ২:১৫ তে বেরিয়ে পড়লাম। জামালপুর পৌঁছানোর পর মেমারী-তারকেশ্বর রোড ধরলাম। এই রাস্তা টা খুব সুন্দর, অনেক চওড়া রাস্তা আর দুপুরে ফাঁকাই ছিল রাস্তাটা। মেমারী-তারকেশ্বর রোড ধরে শুঁড়ে কালনা পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম চকদিঘি। রাস্তার ডান দিকেই চোখে পড়ল বাগানবাড়ির main gate। গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে কিছুটা এগিয়ে (১০০ মিটার) চোখে পড়ল চারিদিক গাছপালায় ঘেরা প্রকান্ড মাঠের মধ্যে প্রাসাদসম এই বাগানবাড়ি। বিকাল ৩ টার একটু আগেই পৌঁছে গেলাম। Google map দেখে আসতে কোনো সমস্যা হয় নি।
এস্টেটের মধ্যে পৌঁছে আমি মাঠে গাড়ি রাখার পর দেখতে পেলাম মাঠের মাঝে অনেকগুলি প্রকান্ড কার্নিথিয়ান স্তম্ভ যুক্ত একটি বৈঠকখানা যার সামনে রয়েছে একটি বড় গাড়ি বারান্দা। এই বাড়িটি প্রায় ৩৫০ বছর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে তৈরী। বাড়ির সামনে মাঠের মধ্যে আছে অষ্টভুজাকৃতি পরিত্যক্ত একটি ফোয়ারা।
প্রায় ৯৯ বিঘা জমি নিয়ে বিস্তৃত চকদিঘির এই সিংহ রায় এস্টেটের মধ্যে আছে বৈঠকখানা (যা আমি প্রথমেই এসে দেখলাম), অন্দরমহল, যাত্রা মহল, কাছারি বাড়ি, দূর্গা দালান এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের স্মৃতি বিজড়িত একটি বাড়ি। আমি এখন বাকি জায়গা গুলি ঘুরে ঘুরে দেখব। তবে সবার আগে এই এস্টেটের ইতিহাসটা একটু জেনে নেওয়া যাক।
আঠারো শতকে জমিদার ললিত মোহন সিংহ রায় এই এস্টেটটি নির্মাণ করেন। কিন্তু এই রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নাল সিংহ। নাল সিংহের প্রপৌত্র এবং ললিত মোহনের পুত্র শ্রী সারদা প্রসাদ সিংহ রায়ের রাজত্বকালে এই জমিদারিটি সমৃদ্ধলাভ করে। চকদিঘির বহু জনহিতকর কাজের প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সারদা প্রসাদের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন, যদিও তিনি ঈশ্বরচন্দ্রের চেয়ে ১৪ বছরের ছোট ছিলেন। অনেকেরই অজানা যে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সমাজ সংস্কারমূলক কাজে তিনি ছিলেন সব সময়ের সঙ্গী। সেই মিত্রতার সূত্রেই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এই বাড়িতে আসাযাওয়া ছিল। এখানে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্য আলাদা একটি বাড়িও ছিল যা আজ ভগ্নপ্রায়।
অন্যদিকে লর্ড কার্জন ও প্রায়ই এই বাগানবাড়িতে এসে এখানে খোলামেলা পরিবেশের মধ্যে দিন কাটাতে খুব ভালোবাসতেন।
বৈঠকখানার পিছনের দিক টি আরো বেশি সুন্দর। বিকালের পড়ন্ত রোদে ঘুরতে বেশ ভালো লাগছিল।
এরপর সামান্য একটু এগিয়ে গিয়ে বাঁদিকে দেখতে পেলাম ভগ্নপ্রায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সেই চকদিঘির বাড়ি। তিনি চকদিঘি এলে এখানে বসবাস করতেন। এখানে তিনি ছোটদের সংস্কৃত পড়াতেন। সারদা প্রসাদ ও বিদ্যাসাগর মহাশয় একসাথে অনেক সমাজ সংস্কারমূলক কাজ করেছেন তা আগেই বলেছি।
কিছুদূর এগিয়ে বাঁদিকে দেখতে পেলাম দুর্গাদালান। প্রতিবছর এখানে খুব ধুমধাম করে দুর্গাপূজা হয়। পরিবারের সকলেই বাইরে থাকলেও পূজার কদিন সবাই এখানে উপস্থিত হন।

দুর্গাদালান এর পাশেই এই বাড়িটির নাম যাত্রামহল। ঠাকুর দালানের সামনের অংশে আগে যাত্রাপালা হত। এই বাড়ি থেকেই বিশেষত বাড়ির মহিলারা ও অন্যান্য সবাই যাত্রা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখতেন বলেই এটিকে বলা হত যাত্রামহল।
এই বাগানবাড়ির ভিতরটিও খুবই সুন্দর যেখানে অনেক সিনেমার shooting হয়েছে আগেই বলেছি। ভিতরে ঢুকলেই দেখতে পাওয়া যায় একটি Grand Staircase (সিঁড়ি), dining hall ইত্যাদি। তাছাড়া ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনুরোধ ও উৎসাহে এই বাড়ির ভিতর একটি লাইব্রেরি তৈরী করা হয়েছিল যা আজ ও বর্তমান।
চকদিঘি বাগানবাড়ি ঘোরা শেষ। ঘড়িতে এখন সময় বিকাল ৪ টা। এবার বাড়ি ফিরতে হবে। বেশ ভালোই লাগল কিন্তু অনেক জায়গায় maintainance-এর অভাব দেখতে পেলাম। হয় তো দুর্গাপুজোর সময় ভালোভাবে maintain করা হয়, সেই সময় এলে আর একটু সাজানো গোছানো লাগবে। সামনের দুর্গাপুজোর সময় আবার একবার আসব ভাবছি।
এই প্রাচীন বাগানবাড়িতে আজকের বিকাল টা বেশ সুন্দর কাটল, সাথে অনেক কিছু জানাও হল। এখন সময় বিকাল ৪:১০। বাগানবাড়ি থেকে বেরিয়ে এগিয়ে চললাম রাস্তার দিকে। পিছনে অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো চকদিঘি বাগানবাড়ি।
এখন আমি জামালপুর থেকে রায়না-শ্যামসুন্দর-সগড়াই হয়ে বর্ধমান পৌছাবো। আজ গল্প এই পর্যন্তই। যারা আমার website-এ প্রথমবার গল্প পড়ছো, আমার এই গল্প টি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমার বাকি গল্প গুলো পড়তে ভুলো না। আমার গল্প ভালো লেগে থাকলে নীচে দেওয়া Share link থেকে বন্ধুদের share করো। খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি আবার এক travel story নিয়ে। Keep visiting my website...