Trip to Chandraketugarh - The lost city of ancient Bengal

October, 2025

অঙ্গ, বঙ্গ এবং কলিঙ্গ ছিল প্রাচীন রাজ্য যা বর্তমান পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশে অবস্থিত। অঙ্গ রাজ্যের কেন্দ্র ছিল আধুনিক পূর্ব বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের কিছু অংশ, বঙ্গ বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিক এবং বাংলাদেশে অবস্থিত ছিল। কলিঙ্গ ছিল ওড়িশা রাজ্যের একটি প্রাচীন নাম।

রাজা চন্দ্রকেতু ছিলেন এই প্রাচীন অঙ্গ রাজ্যের একজন শক্তিশালী রাজা তথা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিযুক্ত একজন সমৃদ্ধ শাসক এবং চন্দ্রকেতুগড় নামক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের সাথে সম্পর্কিত।

বিদ্যাধরী নদীর তীরে এই চন্দ্রকেতুগড় ছিল প্রাচীন বাংলার একটি বন্দর শহর, যা খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। প্রাক-মৌর্য, মৌর্য, শুঙ্গ, কুষাণ, গুপ্ত এবং পাল-সেন যুগে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপে অবস্থিত এই স্থানটি ক্রমাগত সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে, যার প্রমাণ এর সাংস্কৃতিক নিদর্শন দ্বারা পাওয়া যায়।  

গত ২২শে অক্টোবর ঘুরে এলাম সেই চন্দ্রকেতুগড় থেকে। আজ তোমাদের সেই ভ্রমণ কাহিনী এবং চন্দ্রকেতুগড়ের ইতিহাস নিয়ে বলব। তাহলে চলো ঘুরে আসা যাক ২০০০ বছরেরও বেশি পুরোনো এক ইতিহাসের পাতা থেকে। 

বিদ্যাধরী নদীর কাছে অবস্থিত, কলকাতা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে, উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাঁপায় অবস্থিত প্রায় ২৫০০ বছরের পুরানো এই চন্দ্রকেতুগড়, যার নামকরণ হয়েছে এক পৌরাণিক রাজা চন্দ্রকেতুর নাম অনুসারে এবং যেখানে এলে অনুভব করা যায় সিন্ধু সভ্যতার সাথে বাংলার সংযোগ।

গত ২২শে অক্টোবর সকাল ৭ টার কিছু আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বর্ধমান থেকে মেমারি-বৈঁচি-কল্যাণী-হাবড়া হয়ে সকাল ১০:৩০-এ পৌঁছে গেলাম বেড়াচাঁপায় চন্দ্রকেতুগড়ে। চন্দ্রকেতুগড় সম্পর্কে কিছু কথা তো শুরুতেই বললাম। এখন এই চন্দ্রকেতুগড়ের ইতিহাস এবং তার আবিষ্কারের ইতিহাস সম্পর্কে বাকি কথা বলে দিই। 

বেড়াচাঁপায় পৌঁছে প্রথমেই দেখতে পেলাম ASI দ্বারা সংরক্ষিত একটি স্থান। যেখানে লেখা ছিল - "খনা - মিহিরের ঢিপি"। রাজা বিক্রমাদিত্যের সভারত্ন ছিলেন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ বরাহমিহির এবং তার পুত্রবধূ ছিলেন খনা। লোকপ্রবাদ যে, এখানেই খনা ও বরাহমিহিরের বাসস্থান ছিল। 

তোমরা সকলেই খনা ও বরাহমিহিরের ইতিহাস তো জানোই। খনা এত দক্ষ জ্যোতিষী ছিলেন যে ভবিষ্যদ্বাণীতে বরাহমিহিরের নির্ভুলতাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণে খনার জিভ কেটে ফেলা হয়। সেই গল্প না হয় পরে কোনো এক Blog-এ বলব। 

১৯৫৬ থেকে ১৯৬৮ সালের মধ্যে আশুতোষ মিউজিয়াম অফ ইন্ডিয়ান আর্ট দ্বারা পরিচালিত খননের ফলে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক সময়ের একটি মন্দির কমপ্লেক্সের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এই বিশাল স্তূপের মতো ভবনের ধ্বংসাবশেষ সম্ভবত একটি বৌদ্ধ বিহারের অংশ ছিল। এই মন্দিরটিকে আগে গুপ্তযুগের ভাবা হলেও এর নকশা এবং স্থাপত্যশিল্প এবং সজ্জা পরিকল্পনা দেখে ধারণা করা হয় এটি পাল যুগের। ইটের কাজ এবং স্থাপনা নিজেই ইতিহাস বলে দেয়। এখানে খননের ফলে মাটির নিচ থেকে বুদ্ধের প্রতিমূর্তি, বিভিন্ন পোড়ামাটির ফলক, সীলমোহর, বিভিন্ন পুঁথি প্রভৃতি প্রত্নসামগ্রী পাওয়া গেছে। 

এই স্থানের কিছু ছবি নিচে দিলাম তোমরা দেখে নাও। 

"খনা-মিহিরের ঢিপি" দেখার পর সেখান থেকে গিয়েছিলাম চন্দ্রকেতুগড় দুর্গ। বাস্তবে, চন্দ্রকেতুগড় দুর্গে দেখার মতো কিছুই নেই। এটি কেবল একটি বিশাল মাটির ঢিবি। আগে খননকাজ করা হয়েছিল এবং এখন তা ঢেকে দেওয়া হয়েছে, তাই দৃশ্যত দেখার মতো কিছুই নেই। স্থানের চারপাশের এলাকা কৃষি জমি হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তাই ব্যাপকভাবে কিছুই খনন করা হয়নি।

যদিও এই স্থানটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। কিন্তু প্রকৃতির কোলে একটি সুন্দর জায়গা। চারপাশে প্রচুর সবুজ। নির্জনে এই সবুজের মাঝে কিছুক্ষন সময় অতিবাহিত করা যে কতটা শান্তিদায়ক এবং আনন্দময় অভিজ্ঞতা হতে পারে, নিচের ছবিগুলো দেখলে তোমরা তা সহজেই বুঝতে পারবে। 

চন্দ্রকেতুগড় দুর্গতে কিছুক্ষন সময় কাটানোর পর গিয়েছিলাম চন্দ্রকেতুগড় মিউজিয়াম। মিউজিয়ামে কোনো প্রবেশমূল্য নেই। 

চন্দ্রকেতুগড়ের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে খনন করে পাওয়া নিদর্শনগুলি এই সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই সংগ্রহশালায় রয়েছে প্রাক মৌর্য, মৌর্য, কুষাণ, গুপ্ত এবং শুঙ্গ যুগের পোড়ামাটির ভাস্কর্য, প্রাচীন মুদ্রা, মৃৎশিল্প এবং দেব-দেবীর মূর্তি, বৌদ্ধ মূর্তি, পশুমুখ বিশিষ্ট খেলনা গাড়ি ইত্যাদি। এই নিদর্শনগুলি মৌর্য-পূর্ব যুগের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস প্রদর্শন করে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে স্থানটির অতীতকে প্রতিফলিত করে। পোড়ামাটির নিদর্শন, শিলালিপি, মুদ্রা এবং মৃৎশিল্প, একসময়ের সমৃদ্ধ সভ্যতার আভাস দেয়।

এই সংগ্রহশালায় স্থান পাওয়া নিদর্শনগুলির অনেকগুলিই একসময় সংগ্রহ করেছিলেন প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন স্থানীয় ব্যক্তিত্ব শ্রী দিলীপ কুমার মৈতে। 

চন্দ্রকেতুগড়ের গল্প এই পর্যন্তই। এবার বাড়ি ফেরার পালা। চন্দ্রকেতুগড় মিউজিয়াম থেকে দুপুর ১২টায় বেরিয়ে মধ্যমগ্রাম-দমদম-বরাহনগর-বালি-ডানকুনি হয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরেছিলাম। 

গুড়াপের কাছে এসে Food Express -এ ঢুকেছিলাম দুপুরের Lunch-এর জন্য। তখন ঘড়িতে বাজে দুপুর ২টো। ভালোই খিদে পেয়েছিল। 

Food Express -এ গাড়ি park করে প্রথমেই সরষে পোস্ত - restaurant-এ গিয়ে order করলাম "Katla Thali". Thaliতে ছিল ভাত, স্যালাড, ঝুরঝুরে আলুভাজা, পাঁপড়, ডাল, আলুপোস্ত, কাতলা কালিয়া এবং চাটনি। এর আগেও এখানে এসেছিলাম; খাবারের quality নিঃসন্দেহে ভালোই।

এরপর খাওয়া শেষ করে বাইরে Baskin Robbins counter-এ গিয়ে নিলাম Cotton Candy Scoop. 

Ice-cream খাওয়ার পর একটু সময় কাটিয়ে বিকাল ৩:৩০-এ Food Express থেকে বেরোলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। 

এই ছিল আমার ২২শে অক্টোবরের চন্দ্রকেতুগড় ভ্রমণ কাহিনী। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৯ সালে চন্দ্রকেতুগড় পরিদর্শন করে এর প্রাচীনত্ব ও গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং এটিকে "বাংলার হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো" বলে অভিহিত করেন। ইতিহাস প্রেমীদের জন্য চমৎকার জায়গা এই চন্দ্রকেতুগড়। তোমরা যারা প্রাচীন ইতিহাস ভালোবাসো অবশ্যই এখানে একবার এসো, ভালো লাগবে। 

আজ গল্প এই পর্যন্তই। যারা আমার website-এ প্রথমবার গল্প পড়ছো, আমার এই গল্প টি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমার বাকি গল্প গুলো পড়তে ভুলো না। আমার গল্প ভালো লেগে থাকলে নীচে দেওয়া Share link থেকে বন্ধুদের share করো। খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি আবার এক travel story নিয়ে। Keep visiting my website...

Share the Story

If you like my story share this post with your friends...