09/02/2025 : Sunday
Trip No.: - 16এই জায়গার ছবি, ভিডিও Facebook এবং Youtube -এ আগে অনেক দেখেছি। অনেকদিন থেকেই এখানে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। গত পরশু দিন Google map এবং অন্যান্য sources থেকে সমস্ত information সংগ্রহ করে আজ অবশেষে যাচ্ছি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ স্থান - শিলাবতী নদীর তীরে গনগনি, যাকে বলা হয় বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
আজ ভোর ৫ টায় বাড়ি থেকে বেড়িয়েছি। সকালে ভালোই ঠান্ডা লাগছে। আজ দুপুরের মধ্যে ফিরতে হবে কারণ দুপুরে আমার এক জায়গায় নিমন্ত্রণ আছে।
যাইহোক, বর্ধমান থেকে সেহারাবাজার - উচালন হয়ে একলক্ষীর রাস্তা ধরলাম। সেখান থেকে বেঙ্গাই হয়ে পৌঁছে গেলাম কামারপুকুর। কামারপুকুরে একবার দাঁড়িয়ে কেক, বিস্কুট খেয়ে নিলাম। আজ চা করে এনেছিলাম ফ্লাস্কে করে। অল্প চা খেয়ে নিলাম। তারপর কামারপুকুর থেকে এলাম ধাদিকা মোড়। সেখান থেকে শিলাবতী নদী পেরিয়ে প্রবেশ করলাম গড়বেতায়। গড়বেতা থেকে Google map দেখে সকাল ৮ টায় পৌঁছে গেলাম গনগনিতে। গড়বেতা ঢোকার পর গনগনি আসার রাস্তাটা খুব সুন্দর, পিচরাস্তার দুপাশে বড়ো বড়ো গাছের জঙ্গল। Overall road condition ভালোই ছিল।
গনগনি এখন ফাঁকা। গনগনিতে tourist আসা শুরু হয় সকাল ৯:০০ - ৯:৩০ এর পর থেকে। তাই আমি সকাল ৮ টায় আসব ঠিক করেছিলাম।

আমরা সবাই জানি, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত একটি গিরিখাত, যার মধ্য দিয়ে কলোরাডো নদী বয়ে গেছে। ঠিক এরকমই একটি জায়গা রয়েছে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গড়বেতা তে।
এখানে শিলাবতী নদীর তীরে তৈরী হয়েছে প্রাকৃতিক ল্যাটেরাইট পাহাড়। শিলাবতী নদী বয়ে যাওয়ার সময় চারপাশের ল্যাটেরাইট মাটির নরম অংশের ক্ষয়ের ফলে তৈরী করেছিল এই সুন্দর গিরিখাত। সময়ের সাথে সাথে বৃষ্টিপাত ও ঋতু পরিবর্তন এই গিরিখাতকে আরো সুন্দর রূপ দিয়েছে।
নদীর তীরবর্তী এই সুন্দর গিরিখাতগুলি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে আকর্ষণ করে। শীতকালে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদেরও দেখা মেলে।
শিলাবতী নদীর তীরে এই ভূমিরূপটি "গনগনি" নাম পরিচিত, যাকে অ্যারিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সাথে তুলনা করে বলা হয় - "বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন"।
পার্কিং এরিয়া তে গাড়ি রাখার পর দেখলাম, গিরিখাতের নিচে উপর থেকে নামার জন্য সিঁড়ি করা হয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার পর এতো সুন্দর landscape দেখে আমি হাঁ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। what a beautiful landscape! আমি যে সমস্ত ছবি তুলেছি তা নিচে দিয়েছি কিন্তু নিজের চোখে অত সুন্দর landscape দেখার যে অভিজ্ঞতা হলো তা ছবি দেখে তোমাদের কখনোই হবে না। তোমরা একবার গিয়ে যদি দেখো তাহলে দেখবে আর আসতে ইচ্ছা করবে না। একটা কথা বলে রাখি এখানে আসার best season হচ্ছে October থেকে March.
গিরিখাতে নেমে সমস্ত গিরিখাতটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম, সমস্ত পাহাড়গুলিতে উঠেছিলাম। ওঠার সময় মাঝে মাঝে পা পিছলে যাচ্ছিল। সেই সময় কোনো tourists ছিলনা তাই খুব ভালোভাবে প্রকৃতির মধ্যে মিশে গিয়েছিলাম। এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কে ভাষায় প্রকাশ করা সত্যিই খুব কঠিন। নিচে কিছু ছবির একটি gallery দিলাম তোমরা দেখো।
গিরিখাতের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় এসে দেখলাম একটি গুহার মত পাহাড় তৈরী হয়েছে যেটিকে দূর থেকে দেখলে একটি ঘর বলে মনে হয়।
এরপর শেষ একটি পাহাড়ের উপর উঠতে উঠতে সর্বোচ্চ জায়গায় এসে পৌঁছানোর পর একটি "ring"-এর মত জায়গা দেখতে পেলাম। এই ring টা পার হয়ে ওই পার দিয়ে নেমে গিয়ে হাজির হলাম শিলাবতী নদীর পাড়ে।
শিলাবতী নদীর অপর নাম শিলাই নদী। নদীতে বেশি জল নেই। জানিনা বর্ষায় এর রূপ কিরকম থাকে। শান্ত শিলাবতী নদী বয়ে চলেছে আপন মনে। তার পাড়ে পাথরের উপর বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি সকালের রোদ্দুর গায়ে মেখে খেলা করছে।
ঘড়িতে এখন সময় সকাল ৯:৩০। কিভাবে যে দেড় ঘন্টা কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। নদীর পাড় থেকে উঠে গিরিখাত দিয়ে আবার সেই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলাম।
পাশে রয়েছে গনগনি ইকো টুরিজম রিসর্ট। সেখানে ৫ টাকা প্রবেশমূল্য দিয়ে ঢুকে দেখলাম ভিতরে রয়েছে বিশাল বাগান। অনেক শীতকালীন ফুল ফুটে রয়েছে। ভিতরে রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার যেখান থেকে গনগনির সুন্দর দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করা যায়।
রিসর্টের মধ্যে রয়েছে গনগনি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। এখানে এখন breakfast করব। Order করলাম লুচি ও মটর-পনির। ১৫ মিনিটের মধ্যেই চলে এল চারটি গরম গরম বিশাল বড় সাইজের লুচি ও গরম গরম মটর-পনির। খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেস্টুরেন্ট, খাবারের খুবই সুন্দর। কিন্তু এতোবড় সাইজের ৪ টি লুচি খেয়ে পেট পুরো ভর্তি হয়ে গেল। প্রচুর খাওয়া হয়ে গেল। এই চারটি লুচি ও মটর-পনিরের বিল হল মাত্র ৬০ টাকা।
খাওয়ার পর একটু বসে পেমেন্ট করে বেরিয়ে পড়লাম রিসর্ট থেকে।
ঘড়িতে এখন সময় ১০:৪৫। পার্কিং থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যে রাস্তা দিয়ে এসেছি ওই রাস্তা দিয়েই ফিরব। গনগনি থেকে বেরোনোর পর গড়বেতা থেকে ধাদিকা যাওয়ার রাস্তা টা আগেই বলেছি খুব সুন্দর, ফাঁকা রাস্তা দুপাশে ঘন জঙ্গল। একবার ওখানে দাঁড়ালাম। তারপর ধাদিকা মোড় পেরিয়ে কামারপুকুর - বেঙ্গাই - একলক্ষী - উচালন - সেহারাবাজার হয়ে চলে এলাম বাদুলিয়া বলে একটি জায়গায়। আগেই বলেছি আজ দুপুরে আমার এখানে একজনকার বাড়িতে নিমন্ত্রণ আছে। দুপুর ১ টায় তাদের বাড়ি চলে এলাম। এখানে দুপুরে lunch করে সেই সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরব।
আজকের গল্প এই পর্যন্তই। খুব তাড়াতাড়ি আবার আসছি নতুন travel story নিয়ে। এবার যাবো পুরুলিয়া। সাথে থাকো। যারা আমার বাকি গল্প গুলি এখনো পড়োনি অবশ্যই এর মাঝে সেগুলি পড়ে নাও। দেখা হচ্ছে পুরুলিয়ায়।