Trip to Garh Jungle Maharshi Medhashram and Temple of Ichhai Ghosh Yadav

Trip to Garh Jungle Maharshi Medhashram and Temple or Deul of Ichhai Ghosh Yadav in Paschim Bardhaman district.

5 September 2025 by

Classic Sarathi

05/09/2025 : Friday

Trip No.: - 31

আজ ৫ই সেপ্টেম্বর, বাংলায় ১৯শে ভাদ্র। সদ্য ফোটা কাশফুল, আকাশে সাদা তুলোর মতো মেঘ জানান দিচ্ছে শরৎ কাল এসে গেছে। শরৎ কাল মানেই বাঙালির প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। এই বছর দুর্গাপূজা আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি।

কিছুদিন আগেই পশ্চিম বর্ধমান জেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সন্ধান পাই - গড় জঙ্গল, যেখানে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মেধাস মুনির আশ্রম ছিল। শ্রী শ্রী চণ্ডী এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে মেধাস মুনির নির্দেশে রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি এই স্থানে প্রথম দুর্গাপূজা করেছিলেন।

আজ আমি চলেছি সেই গড় জঙ্গলের উদ্দেশ্যে। সকাল ৭:১৫ তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বর্ধমান থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে সকাল ৮:৩০-এ চলে এলাম পানাগড়। পানাগড় থেকে "পানাগড়-মোড়গ্রাম স্টেট হাইওয়ে" ধরলাম। সেখান থেকে গঙ্গারামপুর পেরোনোর পর বাঁদিকে জয়দেব-কেন্দুলী যাওয়ার রাস্তা ধরলাম। কিছুদূর গিয়ে ডিভিসি ব্রিজ পেরোনোর পর ডানদিকে জঙ্গলের রাস্তা ধরলাম।

খুবই ভয়ানক রাস্তার অবস্থা, বড়ো বড়ো গর্ত, জল জমে আছে, পুরো রাস্তা কাদা। স্কুটি নিয়ে যেতে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছিলো, মাঝে মাঝেই কাদায় চাকা আটকে যাচ্ছিলো, গাড়ি থেকে নেমে টেনে টেনে কাদা থেকে গাড়ি তুলতে হচ্ছিল; প্যান্ট, জুতো সব কাদা মাখা হয়ে গেলো।

কিছুদূর যাওয়ার পর আবার ভালো রাস্তা পেলাম। জয়দেব-কেন্দুলী হয়ে ঘুরে এলে রাস্তা ভালো পেতাম যদিও। যাই হোক তারপর থেকে গড় জঙ্গল পর্যন্ত বেশ ভালো রাস্তা। সকালের মিঠে রোদে দুপাশে জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে যেতে বেশ মনোরম লাগছিলো। অবশেষে সকাল ৯:৩০-এ গড় জঙ্গল পৌঁছালাম।

গড় জঙ্গলে পৌঁছে প্রথমেই গেলাম মহর্ষি মেধাশ্রম। শান্ত ও সবুজে ঘেরা পরিবেশ - এক অপূর্ব আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিলনস্থল। পাখির কলতান ও মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি আনে। আজ সকাল থেকেই আকাশ হালকা মেঘাচ্ছন্ন। এই স্থানটি পৌরাণিক তাৎপর্যও বহন করে। কিংবদন্তি অনুসারে এই অঞ্চলটি বসন্তকালীন দুর্গাপূজা অর্থাৎ বাসন্তী পূজার উৎপত্তিস্থল বলে মনে করা হয়।

রাজা সুরথ ছিলেন প্রাচীন কলিঙ্গ রাজ্যের চেদি রাজবংশের সম্রাট। তিনি দেবী দুর্গার ভক্ত ছিলেন। রাজা সুরথ যুদ্ধে হেরে এবং তাঁর পরিবার এবং রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে তাঁর রাজ্য হারান।

তিনি রাজধানী বলিপুর (বর্তমান বোলপুর) ছেড়ে চলে যান। ঘোড়ায় চড়ে তিনি একটি বনে যান এবং ঋষি মেধার আশ্রম খুঁজে পান। ঋষি রাজাকে তাঁর আশ্রমে থাকার জন্য অনুরোধ করেন, কিন্তু আশ্রমের শান্তিপূর্ণ পরিবেশও রাজার মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারেনি।

এই সময়ে, একই আশ্রমে তাঁর আর একজনের সাথে দেখা হয়, যাঁর নাম বৈশ্য সমাধি। তিনি ছিলেন একজন ধনী বণিক, যাঁকে তাঁর লোভী পুত্র এবং স্ত্রী জোর করে তাঁর নিজের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

তাঁরা উভয়েই এই মানসিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলেন না।

তখন মহর্ষি মেধা (অথবা মেধা ঋষি) তাঁদেরকে "দেবীমাহাত্ম্যম" শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং তাঁদের হারানো ভাগ্য এবং শান্তি ফিরে পেতে দুর্গাপূজার আয়োজন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

রাজা সুরথ এবং সমাধি বৈশ্য বসন্তকালে এখানে একটি দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন এবং তাঁদের জীবনে শান্তি ফিরে পেয়েছিলেন। শ্রী শ্রী চণ্ডী এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে গড় জঙ্গলে আয়োজিত এই দুর্গাপূজা ছিল বিশ্বের প্রথম দুর্গাপূজা। এর ফলে বসন্ত বা চৈত্রে বাসন্তী পূজার প্রচলন শুরু হয়েছিল।

রাজা সুরথ এই জঙ্গল অঞ্চলে ত্রিদেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, অর্থাৎ মহাকালী, মহাসরস্বতী এবং মহালক্ষ্মীর মন্দির।

স্বাধীনতার পরপরই, এই পবিত্র আশ্রমের যত্ন নেওয়ার মতো কেউ ছিল না। শহরের ভক্ত, সাধু এবং পণ্ডিতদের সমন্বয়ে গঠিত নবগঠিত আশ্রম কমিটির সময় এবং নিষ্ঠার সাথে সাথে, আশ্রমটি আবারও তার অতীত মহিমা ফিরে পেয়েছে।

আমি প্রথমেই মহাকালী, মহালক্ষ্মী, মহাসরস্বতীর মন্দির এবং সিংহবাহিনী মন্দির দর্শন করলাম। জঙ্গলের মাঝে পথ ধরে ঘুরে বেড়াতে বেশ ভালো লাগছিলো।

এরপর আশ্রমের পিছন দিকে জঙ্গলের ভিতর একটি সরু রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে এগিয়ে চললাম। কিছুদূর হাঁটার পর অবশেষে দেখতে পেলাম সেই ঐতিহাসিক জায়গা যেখানে মেধা ঋষির নির্দেশে রাজা সুরথ এবং সমাধি বৈশ্য বেদী মণ্ডপ স্থাপন করে এবং মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মাণ করে সর্বপ্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেন।

আবার ফিরে এলাম মেধাশ্রমে। আদি সিংহবাহিনী মন্দিরের পাশেই রয়েছে দুর্গামন্দির। প্রতিবছর শরৎকালে দুর্গাপূজার সময়ে এখানে খুব ধুমধামে দুর্গাপূজা পালন করা হয়। সেই সময় অসংখ্য ভক্তের সমাগম হয়। তখন আর এই শান্ত পরিবেশ বজায় থাকে না। দেখলাম তার জন্য এক পাশে মাটির দুর্গাপ্রতিমা নির্মাণের কাজ চলছে।

আশ্রমের পাশে এক প্রাচীন যজ্ঞশালার ভগ্নাবশেষ দেখতে পেলাম। শুধুমাত্র কিছু স্তম্ভ (যার গায়ে বিভিন্ন দেবদেবীর টেরাকোটার মূর্তি রয়েছে) এবং মাঝে একটি যজ্ঞকুন্ড দেখা গেলো।

ঘড়িতে যখন ১০:৩০, সিংহবাহিনী মন্দিরে আরতি শুরু হল। ঘন্টা, কাঁসর, ধামসার শব্দে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠলো। কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে ১০:৪৫ -এর দিকে বেরিয়ে পড়লাম অনতিদূরেই পরবর্তী গন্তব্য শ্যামরূপা মন্দিরের উদ্যেশ্যে।

শ্যামরূপা মন্দিরে যখন প্রবেশ করলাম দেখলাম মন্দিরে পূজা হচ্ছে। এই মন্দিরটাও জঙ্গলে ঘেরা, এবং একইরকম শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশ।

ইতিহাসের পাতায়ও এই অঞ্চলেরও বিশেষ গুরুত্ব আছে। মধ্যযুগে বাংলায় লক্ষ্মণ সেনের শাসনকালে লক্ষ্মণ সেন বখতিয়ার খলজি দ্বারা পরাজিত হলে এই স্থানে এসে আশ্রয় নেন। এখানে তখন সাক্ষাৎ হয় এক কাপালিকের সাথে যিনি নরবলি দিতেন। লক্ষ্মণ সেন কে রাজ্য ফিরে পাওয়ার লোভ দেখিয়ে উনি নরবলির ব্যবস্থাও করেন।

ঠিক সেই সময় অজয়ের অন্য প্রান্ত থেকে এসে হাজির হন খ্যাতনামা বৈষ্ণব কবি এবং গীতগোবিন্দের লেখক - কবি জয়দেব। তিনি লক্ষ্মণ সেন কে মায়ের মূর্তি তে কৃষ্ণের রূপ দেখান যা থেকে শ্যামারুপা নামটি এসেছে। পরবর্তীকালে এই অঞ্চলটিতে ইছাই ঘোষও রাজত্ব করেছেন।

তিনি সেই রাজা সুরথ-এর অধিষ্ঠিত জায়গায় মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ও নিত্যপূজা শুরু হয়।

পরবর্তীতে ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী এই দেবী কে কুলদেবী ও দীক্ষা দেবী বলে মানতেন। অনেকের কাছে এই মা গড়চণ্ডী হিসেবেও পরিচিত।

ঘড়িতে এখন সময় ১১:১৫। ইতিহাস, প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য সংমিশ্রণ - এই গড় জঙ্গল ঘোরা শেষ। এখন এখান থেকে অনতিদূরেই আর একটি জায়গায় যাবো।

ঘড়িতে এখন সময় ১১:২৫। আমি এখন চলে এসেছি গৌরাঙ্গপুরের কাছে অজয় নদের তীরে অবস্থিত ইছাই ঘোষের দেউল। এর পাশেই রয়েছে দেউল পার্ক। বর্তমানে ইছাই ঘোষের দেউল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি স্মৃতিস্তম্ভ যা ASI দ্বারা সুরক্ষিত। এই সুউচ্চ মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে খুব বেশি জানতে পারিনি, যেটুকু জেনেছি নিচে দিলাম।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার গৌরাঙ্গপুরের কাছে অবস্থিত একটি রেখ-দেউল মন্দির। এই মন্দিরের স্থাপত্যে ওড়িশার স্থাপত্যের চিহ্ন বিদ্যমান। মন্দিরটির নির্মাণকাল সঠিকভাবে জানা যায় না। কোনও কোনও মতে, এটি খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল; আবার অপর মতে এটির নির্মাণকাল খ্রিস্টীয় ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়।

স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, গৌরাঙ্গপুরের ইছাই ঘোষের দেউল দেবী ভগবতীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইছাই ঘোষ কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল এবং এটি বাংলার বিরল রেখা দেউলগুলির মধ্যে একটি।

অনেকে দাবি করেন প্রায় ২০০ বছর আগে ব্রিটিশরা এটিকে দখল করেন এবং GTS Tower হিসাবে ব্যবহার করেন।

ইট-নির্মিত এই মন্দিরের গায়ে বিভিন্ন চিত্রকর্ম খোদাই করা রয়েছে। মন্দিরটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে এবং এর ভেতরের গর্ভগৃহটি বছরের পর বছর ধরে খালি পড়ে আছে, কিন্তু বর্তমানে এতে একটি বিশাল শিব লিঙ্গ রয়েছে , যা স্থানীয়রা নিয়মিত পূজা করে।

আজকের ঘোরাঘুরি এই পর্যন্তই। এবার বাড়ি ফেরার পালা।

ঘড়িতে সময় এখন দুপুর ১২ টা। ইছাই ঘোষের দেউল থেকে বেরিয়ে ব্রাহ্মণগ্রাম হয়ে পানাগড়-মোড়গ্রাম স্টেট হাইওয়ে তে উঠলাম। আশা করি দুপুর ১ টায় বাড়ি ফিরে যাবো।

শহরের কোলাহল থেকে দূরে নির্জনে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত একটা জায়গা এই গড় জঙ্গল। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নির্জন প্রকৃতির মাঝে বেশ কিছুটা সময় কাটলো। অনেক অজানা ইতিহাসেরও সম্মুখীন হলাম। আবার সেই শহরের কোলাহলের মধ্যে ফেরার পালা।

আজ গল্প এই পর্যন্তই। যারা আমার website-এ প্রথমবার গল্প পড়ছো, আমার এই গল্প টি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমার বাকি গল্প গুলো পড়তে ভুলো না। আমার গল্প ভালো লেগে থাকলে নীচে দেওয়া Share link থেকে বন্ধুদের share করো। খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি আবার এক travel story নিয়ে। Keep visiting my website...

Share the Story

If you like my story share this post with your friends...

in My Trips

# Ancient deul Ancient deule Ancient temple Basanti Puja Deul Deul patk Deule Deule park Durga Puja Durgapur First Durga Puja Goddess Durga Grah Jungle Ichhai Ghosh Ichhai Ghosh Yadav King Suratha Mahakali Temple Mahalaxmi Temple Maharshi Medhashram Mahasaraswati temple Markandeya Purana Medha Muni Medhas Muni Medhashram Paschim Bardhaman Shyamrupa temple Vaishya Samadhi

Classic Sarathi 5 September 2025

About Me

Professionally I am a school teacher, but travelling is my passion. Frequently I go out alone with my scooter and explore beautiful places.

This blog website is made with stories about my travelling.

Read the stories, watch the photos, feel the places and motivate yourself.

My blogs

⚠️ Say No to Piracy

Any reproduction or illegal distribution of my digital contents in any form will result in immediate action against the person concerned. Don’t use any of my contents without my own permission.

If you want to use my contents feel free to contact me here: - office@classicsarathi.in.

Trip to Valki Machan

Trip to Valki Machan, Purba Bardhaman: Valki Machan Jungle, GTS Brick tower, Jamuna dighi lake.

My Latest Stories

Check out my latest travel stories.

See all

Follow us