18/12/2024 : Wednesday
Trip No.: - 9কিছুদিন আগে আমার একজন Facebook Friend Mr. Indrajit Modak -এর কাছে এই কালিকাপুর রাজবাড়ী-র কথা জানতে পারি। তারপর উনার সাথে কথা বলে সমস্ত তথ্য জানলাম এবং উনি আমাকে রাজবাড়ীর কেয়ারটেকারের contact দিলেন।
রাজবাড়ীতে প্রবেশের জন্য এবং ঘুরে দেখার জন্য কেয়ারটেকারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে তাই , আমি গত পরশু দিন কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলে আজ যাওয়ার দিন ঠিক করলাম এবং আজ সকাল ৯ টায় যাবো সেরকম কথা হল।
আজ সকাল ৭ টায় বাড়ি থেকে বেরোলাম। বর্ধমান থেকে নাবাবহাট হয়ে গুসকরা রোড ধরলাম। গুসকরা স্টেশনের পাশ দিয়ে আউশগ্রাম হয়ে মোড়বাঁধ এসে পৌঁছালাম। মোড়বাঁধ থেকে ছোড়া মোড় থেকে আদুরিয়া জঙ্গলের দিকের রাস্তা ধরলাম। ছোড়ার পর থেকে রাস্তা তা কি সুন্দর! রাস্তার দুপাশে ঘন জঙ্গল। রাস্তাও বেশ ফাঁকা। এই রাস্তার কিছু ছবি দিলাম দেখো।
Google Map দেখে ছোড়া থেকে আকুলিয়া বাস স্ট্যান্ডের পর ডান দিকে মৌখিরা গ্রামের রাস্তা ধরলাম। Google map দেখে ভালোভাবেই একেবারে রাজবাড়ীর সামনে পৌঁছে গেলাম। পৌঁছেই কেয়ারটেকার কে ফোন করলাম। উনি ৫ মিনিটের মধ্যেই চলে এলেন এবং চাবি খুলে দিয়ে বললেন আমাকে ঘুরে দেখতে। ওনার সাথে বেশ কিছুক্ষন গল্প করলাম তারপর উনি একটু কাজে বেরিয়ে গেলেন এবং বললেন আমার ঘোরা হয়ে গেলে আমি যেন ওনাকে ফোন করে ডেকে নিই। কেয়ারটেকার পিকলু দা বেশ ভালো মানুষ। এখন এই কালিকাপুর রাজবাড়ী সম্পর্কে কিছু কথা বলে দিই।

গবেষক জগ্গেশ্বর চৌধুরী তার "বর্ধমান: ইতিহাস ও সংস্কৃতি - তৃতীয় খন্ড" বইতে উল্লেখ করেছেন যে, ১৮১৯ সালে এই জমিদারবাড়ী প্রতিষ্ঠা হয়। সদগোপ জমিদার পরমানন্দ রায় প্রথমে নিকটবর্তী মৌখিরা গ্রামে এই জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিন্তু পরে মৌখিরায় বার্ষিক বর্ষাকালীন বন্যার জটিল সমস্যার কারণে কালিকাপুরে চলে আসেন। পরমানন্দ বীরভূম জেলার গুসকরা শহর থেকে এখানে এসে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
কালিকাপুরে বসতি স্থাপনের পর, পরমানন্দ তার ৭ পুত্রের জন্য ৭টি প্রাসাদ, একটি দুর্গাদালন এবং একটি নাট মন্দির নির্মাণ করেন। এই প্রাসাদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় "সাত মহাল বাড়ি" (সাতটি অংশ বিশিষ্ট প্রাসাদ) বলা হয়। এই ৭টি প্রাসাদ একটি দীর্ঘ করিডোরের মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযুক্ত ছিল।
প্রাসাদের ঠিক বাইরে জোড়া শিব মন্দির রয়েছে, যেখানে চমৎকার পোড়ামাটির কাজ রয়েছে। এই দেউল মন্দিরগুলি - পরমেশ্বর এবং হংসেশ্বর - ১৮৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
বিশাল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করার সাথে সাথে দেখতে পাওয়া যায় কয়েকটি জীর্ণ স্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ, যা নাট মন্দিরের শেষ অবশিষ্টাংশ যার ছাদ অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে। নাটমন্দিরের তিন পাশে অনেক জানালা সহ সারি সারি করিডোর রয়েছে, যেখানে আগেকার দিনে মহিলারা দাঁড়িয়ে পুজো দেখতেন।
রাজবাড়ী ঢোকার আগে প্রথমেই বামদিকে পরমেশ্বর এবং হংসেশ্বর শিবমন্দির দেখতে পেলাম। মন্দিরগুলিতে দেখলাম খুব সুন্দর টেরাকোটার কাজ। রাজবাড়ীর বাইরের দিকে দেখলাম কিছু মেরামতির কাজ চলছে। তারপর রাজবাড়ী তে প্রবেশ করেই দেখলাম মাঝখানে অনেকগুলি স্তম্ভ দেখলাম যা আগেই বলেছি নাটমন্দিরের অবশিষ্টাংশ। তারপর দেখলাম বামদিকে দুর্গাদালান যা সাদা রং করা হয়েছে।

এরপর পুরো রাজবাড়ী ঘুরে ঘুরে দেখলাম। তারপর নিচে থেকে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলাম দোতলায়। সেখানে ঘোরার পর আবার সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলাম একেবারে ছাদে। ছাদে কিছুক্ষন ঘুরে বেড়ালাম। তারপর আবার নিচে ফিরে এলাম। এরকম একটি পুরোনো জমিদারবাড়ীতে একা একা ঘুরতে বেশ ভালো লাগছিল। রাজবাড়ীর দেওয়াল স্পর্শ করে যেন বারবার হারিয়ে যাচ্ছিলাম ইতিহাসের পাতায়। সত্যিই অপূর্ব এক অনুভূতি। রাজবাড়ীর কিছু ছবি দিলাম দেখো তোমরা।
এভাবে রাজবাড়ীতে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে দেড় ঘন্টা কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। এখন ঘড়িতে সময় সকাল ১০:৩০, এবার বেরোতে হবে। আমি পিকলুদা কে ফোন করে ডেকে নিলাম। তারপর রাজবাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়লাম। সামনের রাস্তা দিয়ে সামান্য এগিয়ে গিয়ে ডান দিকে রাস্তার ধারেই দেখতে পেলাম ভগ্নপ্রায় "নীলকুঠি"।
নীলকুঠি দেখে কালিকাপুর থেকে বেরিয়ে গেলাম। তারপর একবার আদুরিয়া জঙ্গলে ঢুকলাম। খুবই সুন্দর জঙ্গলটা। অল্প একটু ঘুরলাম। আদুরিয়া জঙ্গল আজকের tour plan-এ নেই। কিছুদিন পর এই আদুরিয়া জঙ্গল টা ঘুরতে আবার একবার আসব।
আবার সেই একই রাস্তায় ফেরার পথ ধরলাম। খিদে পেয়েছে। Breakfast করতে হবে। গুসকরার কাছে রাস্তার ধরেই একটা restaurant-এ ঢুকলাম। Hotel Guskara Inn. প্রথমে কচুরি এবং মটর-পনির খেলাম। তারপর কিছুক্ষন বসে একটা স্পেশাল চা নিলাম। কচুরি, মটর-পনির ভালোই লাগলো কিন্তু চা টা অসাধারণ। এদিকে এলে এখানে একবার অন্তত চা খাওয়ার জন্য দাঁড়াবো।
তারপর একটানা বাড়ি চলে এলাম। এখন বাজছে দুপুর ১:৩০, এইমাত্র বাড়ি পৌঁছালাম। আজকের trip টা একটু অন্যরকম ছিল, চারিদিকে সবুজ জঙ্গলে ঘেরা এই কালিকাপুর রাজবাড়ী ঘুরতে খুব ভালো লাগল, অসাধারণ সুন্দর এক পরিবেশ। অনেক অজানা ইতিহাস জানতে পারলাম। কেয়ারটেকার পিকলুদা কে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং অবশ্যই Mr. Indrajit Modak কে অসংখ্য ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটি রাজবাড়ীর তথ্য দেওয়ার জন্য।
এখনো যারা আমার বাকি Travel story গুলো পড়োনি, তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলো। খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি আবার এক Travel story নিয়ে। Keep visiting.