03/03/2025 : Monday
Trip No.: - 20কিছুদিন আগে একদিন স্কুলে টিফিন টাইম-এ টিফিন খাওয়ার পর স্টাফ রুমে বসে আছি আর ভাবছি এর পর কোথায় যাওয়া যায় তখন মোবাইল বের করে Google-এ type করলাম "ASI Places near me". তখন Google search result-এ প্রথমেই পেলাম "Kalna Rajbari campus" আর তার কিছু নিচে পেলাম বাঁশবেড়িয়ার "বাসুদেব মন্দির"। এই দুটি জায়গা note করে ঘরে এসে study করতে বসলাম।
Study করে জানতে পারলাম এই কালনা রাজবাড়ী ক্যাম্পাসের সামনেই রয়েছে ১০৮ শিবমন্দির যেরকম আমাদের বর্ধমানের নবাবহাট-এ আছে। আর ঐদিকে বাঁশবেড়িয়ার অনন্ত বাসুদেব মন্দিরের পাশে রয়েছে হংসেশ্বরী মন্দির। কালনা তো বর্ধমান থেকে কাছেই। ঠিক করলাম এই কালনা আর বাঁশবেড়িয়া দুটি জায়গা একদিনেই cover করব। একটু লম্বা tour হবে; এতদিন একটা বিশেষ জায়গায় গিয়ে তার আসে পাশে সব কিছু দেখতাম এবার দুটি সম্পূর্ণ আলাদা জায়গায় যাওয়া হবে একই দিনে।
বাড়ি থেকে হয়ে সকাল ৭ টায় বেরোলাম। বর্ধমান থেকে প্রথমেই গেলাম শক্তিগড়। সেখানে Food Town Dhaba-তে কচুরি আর ঘুগনি দিয়ে সকালের breakfast সারলাম। এখানে আগে খেতে আসা হয় নি, খাবারের quality বেশ ভালোই। Breakfast করার পর শক্তিগড় থেকে রসুলপুর - মেমারী হয়ে বৈঁচি পৌছালাম। বৈঁচিমোড় থেকে বাঁদিকে কালনার রাস্তা ধরলাম। বৈঁচি থেকে বৈদ্যপুর হয়ে Google map দেখে সকাল ৯ টায় পৌঁছে গেলাম কালনা ১০৮ শিবমন্দিরের সামনে।
এই জায়গায় রাস্তা খুব সংকীর্ণ এবং গাড়ি পার্কিংয়ের খুব সমস্যা। ১০৮ শিবমন্দিরের পাশে একটা খুব সুন্দর জায়গা দেখে আমি আমার গাড়ি করলাম।
১। কালনা ১০৮ শিবমন্দির

কালনার এই ১০৮ শিবমন্দির নব কৈলাস নামেও পরিচিত। ১৮০৯ সালে বিষ্ণুপুর সম্পত্তির হস্তান্তর উদযাপনের জন্য মহারাজা তেজ চন্দ্র বাহাদুর দ্বারা নির্মিত এই ১০৮ টি শিবমন্দির দুটি সমকেন্দ্রিক বৃত্তে সাজানো যার বাইরের বৃত্তে ৭৪টি মন্দির রয়েছে, আর ভেতরের বৃত্তে ৩৪টি। সবকটি মন্দির আটচালা শৈলীর। বাইরের বৃত্তের শিবলিঙ্গগুলি কালো রঙের এবং ভিতরের বৃত্তের শিবলিঙ্গগুলি সাদা রঙের।
গেটে ঢোকার সময় গেটের পাশে জুতো খুলে ভিতরে ঢুকলাম। সেই সময় কেউ ছিলনা। বেশ শান্ত পরিবেশ। সবকটি মন্দির দর্শন করে ভিতরে বসার জায়গা আছে সেখানে কিছুক্ষন বসলাম। এরপর যখন ঘড়িতে দেখি ৯:২০ বেজে গেছে মন্দির থেকে বেরোলাম। ১০৮ শিবমন্দির থেকে বেরিয়ে রাস্তার উল্টো দিকেই Kalna Rajbari Campus ঢোকার গেট। সেই গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
2. Kalna Rajbari Campus
পশ্চিমবঙ্গের অম্বিকা কালনায় ১০৮ শিবমন্দিরের সামনেই অবস্থিত কালনা রাজবাড়ি কমপ্লেক্সটি বাংলার স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অসাধারণ নিদর্শন। বর্ধমানের মহারাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় মূলত ১৮শ এবং ১৯শ শতাব্দীতে নির্মিত এই কমপ্লেক্সটির মধ্যে বৈচিত্র্যময় টেরাকোটার বিভিন্ন মন্দির দেখতে পাওয়া যায়। এই কমপ্লেক্সটি ASI দ্বারা সংরক্ষিত এবং খুব সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো।

গেটে ঢোকার পর প্রথমেই বামদিকে একটি ছোট কামান দেখতে পেলাম। তারপরেই বাঁদিকে দেখলাম ১৮৪৯ সালে রাজা প্রতাপচাঁদের প্রথম স্ত্রী পেয়ারীকুমারী দেবীর তত্ত্বাবধানে রামহরি মিস্ত্রি দ্বারা নির্মিত প্রতাপেশ্বর শিবমন্দির, যার গায়ে অসাধারণ টেরাকোটার কাজ, যেখানে ফুটে উঠেছে যুদ্ধের দৃশ্য, দেব দেবীর মূর্তি, প্রাত্যহিক জীবনের কাহিনী ইত্যাদি।
প্রতাপেশ্বর মন্দিরের পাশে একটি অষ্টভুজাকার রাস-মঞ্চ রয়েছে। এটি একটি অষ্টভুজাকার, ছাদবিহীন, ২৪ টি খিলান সহ ইটের তৈরি কাঠামো। ভগবান কৃষ্ণের শরৎকালের রাস-লীলা এখানে মঞ্চস্থ হত।

রাসমঞ্চ দেখার পর সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে একটা গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভিতরে রয়েছে বিখ্যাত লালজি মন্দির এবং গিরিগোবর্ধন মন্দির।
১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা জগৎ রামের স্ত্রী রানী ব্রজকিশোরী দ্বারা নির্মিত ২৫ রত্নযুক্ত এই লালজি মন্দির এই কমপ্লেক্সের সবচেয়ে পুরানো মন্দির, যা রাধা-কৃষ্ণকে উৎসর্গ করা। এই মন্দিরেরও টেরাকোটার কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
এরপর লালজি মন্দির কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে বাঁদিকে গিয়ে প্রথমেই দেখলাম ১৯ শতকে নির্মিত ৫ টি পাশাপাশি আটচালা শিবমন্দির এবং তাদের পশে একটি সমতল ছাদযুক্ত কাঠামো।

এরপর আর একটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলাম বিজয় বিদ্যানাথ মন্দির।

বিজয় বৈদ্যনাথ মন্দিরের পাশেই রয়েছে ২৫ টি চূড়া বা রত্ন যুক্ত কৃষ্ণচন্দ্রজী মন্দির। রাজা ত্রিলোকচাঁদ তাঁর মা লক্ষ্মীকুমারী দেবীর নামে ১৭৫১ - ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি করেছিলেন। এই মন্দিরের প্রধান দেবতা হলেন কৃষ্ণচন্দ্র এবং রাধা। এর চারদিকে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার রয়েছে। এটির সম্মুখভাগে একটি সমৃদ্ধ পোড়ামাটির অলঙ্করণ রয়েছে, যা পৌরাণিক কাহিনী, মহাকাব্য এবং এমনকি দৈনন্দিন জীবনের দৃশ্যগুলিকে চিত্রিত করে করা হয়েছে।
এর আগে ৩০ শে নভেম্বর বিষ্ণুপুর থেকে ঘুরে এসেছি যার গল্প তোমরা এর আগে পড়েছো, আর আজ এই ক্যাম্পাসে ৪০০ বছরের পুরানো রাজকীয় নির্মাণশৈলী এবং টেরাকোটার কাজ দেখে সেই বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দির গুলির কথা বার বার মনে পড়ছিল। ক্যাম্পাসটি খুবই শান্তিপূর্ণ একটি জায়গা। ক্যাম্পাসে হেঁটে বেড়ানো এবং ধর্মের প্রকৃত শান্তি অনুভব করা ছিল আমার প্রত্যাশার বাইরে।
কালনার trip এই পর্যন্তই। ১০:৩০ -এ এই রাজবাড়ী ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেলাম। গাড়ি নিয়ে এবার চললাম বাঁশবেড়িয়া পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
এখন অম্বিকা কালনা থেকে বেরিয়ে মগরা - কল্যাণী হয়ে বাঁশবেড়িয়ার দিকে যাচ্ছি Google map দেখে। কালনা থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর একটা গাছতলায় দাঁড়িয়ে কিছু বিস্কুট ও চিড়েভাজা খেয়ে নিয়েছিলাম।
এখন ঘড়িতে সময় ১১:৪৫। আমি চলে এসেছি বাঁশবেড়িয়া। এখানে পাশাপাশি দুটি মন্দির আছে - শ্রী হংসেশ্বরী মন্দির এবং অনন্ত বাসুদেব মন্দির। মন্দির চত্বরের বাইরে পার্কিং স্পেস অনেক। নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি রেখে এবং বাইরে জুতো খুলে মন্দির চত্বরে প্রবেশ করলাম।
৩। শ্রী হংসেশ্বরী মন্দির এবং অনন্ত বাসুদেব মন্দির
হংসেশ্বরী মন্দিরটির কিছু অংশ পাথর এবং কিছু অংশ ইঁট দিয়ে তৈরী। এই মন্দিরের রত্ন বা চূড়াগুলি প্রচলিত খাঁজের পরিবর্তে পদ্ম পাপড়ির কারুকার্য যুক্ত। মন্দিরের পবিত্র গর্ভগৃহে পদ্মের কাঠামোর উপর কাঠের দেবী হংসেশ্বরীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে।
রাজা নৃসিংহদেব ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটির নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর এটি অসমাপ্ত থেকে যায়। তাঁর বিধবা পত্নী রাণী শঙ্করী ১৮১৪ সালে এর নির্মাণ শেষ করেন।
শ্রী হংসেশ্বরী মন্দিরের পাশেই রয়েছে একরত্ন টেরাকোটা মন্দির - অনন্ত বাসুদেব মন্দির। কুঁজ আকৃতির এই মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার কাজ দেখতে পেলাম যেখানে যুদ্ধের দৃশ্য, দেব দেবীর মূর্তি, কৃষ্ণের জীবনী, বন্য জন্তুর মূর্তি ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
জমিদার রামেশ্বর দত্ত ১৬৭৯ খ্রীষ্টাব্দে এই অনন্ত বাসুদেব মন্দিরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন।
এখন ঘড়িতে সময় দুপুর ১২:৩০। আজকের tour এই পর্যন্তই। এবার ফেরার পালা। মন্দির চত্বর থেকে বেরিয়ে জুতো পড়ে, গাড়ি নিয়ে বাঁশবেড়িয়া থেকে বেরিয়ে গেলাম। কল্যাণী হয়ে মগড়া ব্রিজ পেরিয়ে বাঁদিকে গুড়াপের দিকের রাস্তা ধরলাম। এই রাস্তা টা খুব সুন্দর, বেশ ফাঁকা ফাঁকা।
গুড়াপ থেকে Durgapur Expressway ধরে বর্ধমানের দিকে এগোতে থাকলাম। এখন রোদের তাপ বেশ ভালোই। পালসিট টোল - এর কিছু আগে রাস্তার ধারে গাছের ছায়ায় একটু দাঁড়ালাম। পাশেই ডাব বিক্রি হচ্ছিল। ৫০ টাকা দিয়ে একটা ডাব-এর জল (শাঁস সহ) খেলাম।
"Dosa Hut"-এ যখন ঢুকলাম ঘড়িতে সময় দুপুর ২:৩০। "Dosa Hut"-এ ঢুকে একটু fresh হয়ে order দিলাম - একটা Onion Masala Dosa আর Special Lassi.
খাওয়ার পর একটু বসে বাড়ি চলে এলাম। বিকাল ৩:৩০ -এ বাড়ি চলে এলাম। আজ একই দিনে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গায় হল। ইতিহাসের কত অজানা তথ্য জানতে পারলাম তারসাথে বাংলার স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিদর্শন দেখে মুগধ হয়ে গেলাম।
আজ গল্প এই পর্যন্তই। খুব তাড়াতাড়ি আসছি আবার এক Travel Story নিয়ে। Keep visiting my website...