Trip to Mama Bhagne Pahar and Bakreswar Dam in Birbhum

Trip to Mama Bhagne Hill near Dubrajpur and then Bakreswar Dam in Birbhum.

21 November 2025 by

Classic Sarathi

November, 2025

Trip No.: - 35

দেখতে দেখতে শীতকাল চলে এলো। এই সময় সকালের মিঠে রোদে নির্জনে সবুজ প্রকৃতির কোলে কিছুক্ষন সময় কাটাতে কার না ভালো লাগে! কিছুদিন আগেই একমাস ছুটি পার করে আমার স্কুল খুলে গেছে। আবার সেই রোজকার গতানুগতিক জীবন শুরু হয়ে গেছে।

এই শীতের সকালে সেই ব্যস্ততাময় জীবন থেকে সামান্য মুক্তির জন্য গত ১৫ই নভেম্বর শনিবার ঘুরে এলাম বীরভূম জেলার দুটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র তথা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ স্থান - মামা ভাগ্নে পাহাড় এবং বক্রেশ্বর ড্যাম।

আমি জানি তোমরা সবাই অনেকদিন ধরে নতুন গল্প পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলে, তাহলে চলো শুরু করা যাক। গল্প ও ছবির মাধ্যমে তোমরাও একটু প্রকৃতির স্পর্শ অনুভব করো।

গত ১৫ই নভেম্বর ভোর ভোর করে বাড়ি থেকে বের হয়ে বর্ধমান থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পানাগড় আসার পর সেখান থেকে পানাগড়-মোড়গ্রাম স্টেট হাইওয়ে ধরে সকাল ৮ টার দিকে পৌঁছে গিয়েছিলাম বীরভূমের দুবরাজপুরের কাছে মামা-ভাগ্নে পাহাড়, যা প্রকৃতির ভারসাম্যপূর্ণ আচরণের এক সাক্ষী বলা চলে।

বাড়ি থেকে অনেকদূর গাড়ি চালিয়ে গিয়েছিলাম; তাই প্রথমেই গাড়ি রেখে, ফ্লাস্কে করে নিয়ে যাওয়া মকাইবাড়ি ফার্স্ট ফ্লাশ দার্জিলিং টি খেয়ে শরীর কে একটু সতেজ করে নিয়ে তারপর এগিয়ে গেলাম মামা ভাগ্নে পাহাড়ের দিকে। প্রথমেই দেখতে পেয়েছিলাম এক বিশালাকার মন্দির যার নাম পাহাড়েশ্বর শিব মন্দির, সে কথা পরে বলছি।

বীরভূম জেলায় দুবরাজপুর শহরের কাছে এই মামা ভাগ্নে পাহাড় কোনো সুউচ্চ পাহাড় নয়। অনেক বৃহৎ গ্রানাইট পাথরের সংগ্রহ বলা চলে যেখানে একটির উপর আর একটি পাথর ভারসাম্য বজায় রেখা অবস্থান করছে। সেই সমস্ত পাথরকে ঘিরে চারপাশে রয়েছে সবুজ গাছপালার সমারোহ। যেন ভারসাম্যপূর্ণ শিলাপাথরের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক পাথুরে উপত্যকা। এই অনন্য প্রাকৃতিক গঠন, তার সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলেমিশে এক কোথায় মনোমুগ্ধকর যা সকল প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের আকর্ষণ করে।

আমি যে সময় গিয়েছিলাম সে সময় সেদিন আর কোনো পর্যটক ছিল না। এরকম প্রকৃতির মাঝে যখন আমি যাই সবসময় এরকমই নির্জনতা পছন্দ করি। সেরকম ভাবেই পূর্বপরিকল্পনা করা থাকে। প্রাকৃতিকভাবে সুসজ্জিত গ্রানাইট পাথরের সারির মাঝখান দিয়ে নির্দিষ্ট পথ বরাবর কিছুদূর উপরে উঠে দেখতে পেলাম একটি কালীমন্দির।

তারপর তার পাশ দিয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার পর, আরো কিছুটা উপরে ওঠার পর অবশেষে সেই একই আকৃতির পাথর জোড়া কে দেখতে পেলাম যেগুলি বৃহৎ একটি পাথরের তলের উপর পাশাপাশি অবস্থান করছে। এদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড় পাথরটি কে বলা হয় "মামা" আর ছোটোটিকে বলা হয় "ভাগ্নে"। এই থেকেই এই জায়গাটার নাম হয়েছে "মামা-ভাগ্নে পাহাড়"। উপর থেকে দূরে দুবরাজপুর শহর কে ছবির মতো সুন্দর দেখাচ্ছিল।

সেদিন নির্জন ও শান্ত শীতের সকালে ওই জায়গার কিছু ছবি নিচে দিলাম দেখো।

এই মামা ভাগ্নে পাহাড়ের সৃষ্টি সম্পর্কে দুটি পৌরাণিক কাহিনী এবং এর সৃষ্টির আসল ভৌগোলিক তথা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তোমাদের বলি।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, একবার ভগবান রাম লঙ্কায় পৌঁছানোর জন্য একটি সেতু তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। সেই উদ্দেশ্যে তাঁর যা প্রয়োজন ছিল তা ছিল কিছু পাথর। তাই তিনি হিমালয় থেকে তাঁর আকাশযান রথে করে পাথর সংগ্রহ করে আনছিলেন। সেই সময় কোনও কারণে এই নির্দিষ্ট অঞ্চলে ঘোড়াগুলি হঠাৎ ভয় পেয়ে যায় এবং রথটি একদিকে হেলে পড়ে এবং রথ থেকে কিছু পাথর মাটিতে পড়ে যায়।

মামা ভাগ্নে পাহাড়ের সাথে আরও একটি কিংবদন্তি জড়িত। বিশ্বাস করা হয় যে একবার নির্মাতা দেবতা বিশ্বকর্মাকে স্বয়ং মহাদেব এই এলাকায় আরেকটি কাশী নির্মাণের নির্দেশ দেন। বলা হয়েছিল যে তাকে মাত্র এক রাতের মধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে তিনি কেবল সমস্ত পাথর সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এই কারণেই আমরা এখানে উপস্থিত পাথরগুলি দেখতে পাচ্ছি।

এবার আসি এই মামাভাগ্নে পাহাড় সৃষ্টির আসল বৈজ্ঞানিক তথা ভৌগোলিক ব্যাখ্যায়।

এই মামা ভাগ্নে পাহাড় ছোট নাগপুর মালভূমির পূর্বতম দিকের একটি সম্প্রসারণ। দুবরাজপুরের এই অঞ্চলটি সমতল সমভূমি দ্বারা মূল মালভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন। তারফলে এই মামা ভাগ্নে পাহাড়কে সমতল ভূমি এবং সবুজে ঘেরা একটি পাথুরে দ্বীপের মতো দেখায়।

অপর একটি যুক্তি সবচেয়ে বৈধ এবং গ্রহণযোগ্য। এই যুক্তিতে বলা হয়েছে যে মামা ভাগ্নে পাহাড় ছোট নাগপুর মালভূমির একটি বর্ধিত অংশ। বিশ্বাস করা হয় যে এখানে প্রাকৃতিক ক্ষয় প্রক্রিয়ার কারণে এখানের ভূমি নীচের দিকে নেমে যায়। কিন্তু শিলাগুলি কম প্রভাবিত হয় এবং তাই তারা খাড়া অবস্থানে থাকে।

এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যে এই এলাকায় আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ ছিল এবং পরে লাভা ঠান্ডা হয়ে গেলে এই শিলাগুলি বড় পাথরে পরিণত হয়েছিল। এই স্থানের কাছেই একটি উষ্ণ প্রস্রবণের উপস্থিতি এই গবেষণাকে কিছুটা সমর্থন করে।

কিছুক্ষন ঘোরার পর আবার একই পথে নিচে নেমে চলে এলাম। শীতের সকালে মিঠে রোদে এই সুন্দর পাথুরে উপত্যকার প্রাকৃতিক শোভা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তবে বেশ কয়েকটি ব্যাপার আমার মোটেও ভালো লাগে নি। তা হল পাহাড়ের উপর যত্রতত্র মন্দির নির্মাণ, পাথরের উপর নাম লেখা, সাধু ও ভিখারীদের আনাগোনা বৈজ্ঞানিক তথা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অত্যন্ত বিকৃত করে তুলেছে। এগুলোর প্রাচুর্য্য না থাকলে হয়তো আরও সুন্দর হত এই প্রকৃতি।

এই মামা ভাগ্নে পাহাড়ের এখানে কিছু সিনেমার শুটিং ও হয়েছে। যেমন সত্যজিৎ রায়ের অভিযান, গুপী গাইন বাঘা বাইন ও সন্দীপ রায়ের রবার্টসনের রুবি, গোঁসাইপুর সরগরম ইত্যাদি ।

মামা ভাগ্নে পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়েশ্বর মন্দির। এই মন্দিরটি ভগবান শিবকে উৎসর্গীকৃত।

শঙ্কু আকৃতির সাদা রঙের মন্দির। ভিতরে দুটি বিশাল বড় বড় পাথরকে শিব জ্ঞানে পূজা হয়। মন্দিরটির সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠার তারিখ জানা যায়নি, তবে এর স্থাপত্য এবং স্থানীয় কিংবদন্তি মধ্যযুগীয় উৎপত্তির ইঙ্গিত দেয়, সম্ভবত প্রাক-মুঘল যুগ থেকে। মন্দিরের গায়ে খুব সুন্দর নকশা। বিশাল উঁচু মন্দিরটি সুঁচের মত সরু হয়ে উঠে গেছে।

ঘড়িতে যখন সকাল ১০টা বাজে, মামাভাগ্নে পাহাড় থেকে বেরিয়ে Google map দেখে চলে গেলাম বক্রেশ্বর ড্যাম। তোমরা সবাই জানো, বক্রেশ্বর এ উষ্ণ প্রস্রবণ আছে। এই tour-এ সেই উষ্ণ প্রস্রবণ যাই নি।

যাই হোক, সকাল ১০:৩০-এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম বক্রেশ্বর ড্যাম। চারিদিক বেশ নির্জন। ড্যামের বাঁধের উপর রাস্তাটা খুব সুন্দর। বেশ ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছিল।

বক্রেশ্বর ড্যাম হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বক্রেশ্বর নদীর উপর নির্মিত একটি জলাধার, যা মূলত নিকটবর্তী বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে জল সরবরাহের জন্য তৈরি হয়েছে। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রও, যা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।

এই জলাধারের অপর নাম - নীল নির্জন জলাধার। শীতকালে অনেক পরিযায়ী পাখি এখানে আসে।

সেদিন সকাল ১০:৩০-এ যখন ওখানে পৌছালাম রোদের তাপ অনুভূত হলেও ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়ার জন্য এক সুন্দর পরিবেশ ছিল ড্যামের ধারে। আমি ড্যামের ধারে বসে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া খাবার দিয়ে টিফিন সারলাম। সামনে সুদূর বিস্তৃত নীল জলরাশি এবং নির্জন পরিবেশ যা এর "নীল নির্জন জলাধার" নাম কে সার্থক করে। মাঝে মাঝে দূর থেকে ভেসে আসছিল পরিযায়ী পাখিদের কলতান। যেন এক নেশা ধরানো পরিবেশ যা মনে আনে পরম শান্তি।

জলাধারের পাশে কিছুক্ষন সময় কাটানোর পর ১১:৩০ -এ বেরিয়ে পড়লাম ফেরার জন্য।

ফেরার সময় ইলামবাজার-বোলপুর হয়ে গুসকরা রোড ধরলাম। মাঝে ইলামবাজার জঙ্গল রোডে দাঁড়িয়ে কিছু ছবি তুলেছিলাম। গুসকরা যখন ক্রস করছি তখন ঘড়িতে দুপুর ১টা।

Lunch-এর জন্য গেলাম ওরগ্রামে হোটেল খোয়াই। নিয়েছিলাম ভেজ খালি আর কাতলা কালিয়া। ভেজ থলির মধ্যে ছিল - ভাত, ঘি, শাকভাজা, আলুভাজা, উচ্ছেভাজা, ভেজ ডাল, আলুপোস্ত, পনির তরকারি, চাটনি, পাঁপড়, দই, রসগোল্লা, স্যালাড। খাবার বেশ ভালোই ছিল তবে কাতলা কালিয়া টার taste বেশ unique ছিল।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকাল ৩টার কিছু আগে বাড়ি পৌঁছেছিলাম।

এই ছিল আমার গত ১৫-ই নভেম্বরের ভ্রমণ কাহিনী। আজ গল্প এই পর্যন্তই। যারা আমার website-এ প্রথমবার গল্প পড়ছো, আমার এই গল্প টি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমার বাকি গল্প গুলো পড়তে ভুলো না। আমার গল্প ভালো লেগে থাকলে নীচে দেওয়া Share link থেকে বন্ধুদের share করো। খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি আবার এক travel story নিয়ে। Keep visiting my website...

Share the Story

If you like my story share this post with your friends...

in My Trips

# Bakreswar Bakreswar Dam Bakreswar River Beautiful nature Birbhum Bolpur Chota Nagpur Plateau Dubrajpur Granite stone Guskara road Hill Hill area History of Birbhum Hotel Khoai Ilambazar Ilambazar forest Illambazar Lunch at Hotel khoai Mama Bhagne Mama Bhagne Hill Mama Bhagne Pahar Natural beauty Volcanic activity Winter Winter morning Winter nature

Classic Sarathi 21 November 2025

About Me

Professionally I am a school teacher, but travelling is my passion. Frequently I go out alone with my scooter and explore beautiful places.

This blog website is made with stories about my travelling.

Read the stories, watch the photos, feel the places and motivate yourself.

My blogs

⚠️ Say No to Piracy

Any reproduction or illegal distribution of my digital contents in any form will result in immediate action against the person concerned. Don’t use any of my contents without my own permission.

If you want to use my contents feel free to contact me here: - office@classicsarathi.in.

Trip to Chandraketugarh - The lost city of ancient Bengal

Trip to Chandraketugarh. Chandraketugarh Fort, Chandraketugarh Museum, Khana-Mihirer Dhipi. In search of history of Chandraketugarh.

My Latest Stories

Check out my latest travel stories.

See all

Follow us