Skip to Content

Trip to Purulia - Garh Panchakot and Baranti

Trip to Purulia - Garh Panchakot, Veti village for Palash flower and Baranti Dam.

23/03/2025 : Sunday

Trip No.: - 21

এখন মার্চ মাস আর মার্চ মাস মানেই অনুপম রায়ের লেখা একটাই গান মনে আসে - 

বাতাসে বহিছে প্রেম
নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে
বসন্ত এসে গেছে ...

বসন্ত এসে গেছে! আর বসন্ত মানেই পলাশ ফুল আর পলাশ ফুল মানেই পুরুলিয়া। তাই, পলাশ ফুলের সন্ধানে, পাহাড়ের আহ্বানে, আজ আবার বেরিয়ে পড়েছি পুরুলিয়া অভিযানে। 

গত ১৩ই ফেব্রুয়ারী পুরুলিয়া গিয়েছিলাম সেটা তোমরা সকলেই জানো। সেদিন গিয়েছিলাম জয়চন্ডী পাহাড়। সেই সময় পুরুলিয়া তে পলাশ ফুল ফোটে নি। এবার tour-এর যেহেতু main attraction পলাশফুল তাই ভেটিগ্রাম যাবো, পুরুলিয়ার যেখানে প্রচুর পলাশফুল দেখতে পাওয়া যায় আর যাবো বড়ন্তি ড্যাম; তবে সবার প্রথমে যাব গড় পঞ্চকোট। ঠিক এইভাবেই আজকের tour plan সাজিয়েছি। 

গত ২ দিন ধরেই হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। গত পরশুদিন Weather report দেখতে গিয়ে দেখি আজ ও Light rain -এর সম্ভাবনা আছে পুরুলিয়া তে। তাই ভাবলাম আজকের দিন টা avoid করে সোমবার যাই, কিন্তু এই মার্চ-এর শেষের দিকে পুরুলিয়া তে তাপমাত্রা ভালোই বেড়ে গেছে আর Light Rain মানে weather বেশ মনোরম থাকবে, পাহাড়ে বৃষ্টি ও দেখা হবে আর crowd ও কম থাকবে। তাই Light Rain alert মাথায় নিয়েই আজকেই বেরিয়ে পড়লাম। 

আজ রাত ১ টায় ঘুম থেকে উঠে হয়ে ভোর ৩:৩০-এ বাড়িতে থেকে বেরোলাম। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় দেখলাম আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার। আজ অনেকটা distance drive করব। তাই গান গাইতে গাইতে এগিয়ে চললাম। আমি যখন একটু বেশি distance journey করি তখন নিজেই গান গাইতে গাইতে যাই, এটা করে দেখেছি distance টা কিছু মনেই হয় না। বর্ধমান থেকে Durgapur expressway হয়ে বুদবুদ আসার পর রাস্তার ধরে একবার দাঁড়ালাম ১৫ মিনিটের জন্য। ফ্লাস্কে চা করে এনেছি। চা-বিস্কুট খেয়ে আবার যেতে শুরু করলাম। Durgapur expressway ধরে দুর্গাপুর পেরিয়ে একেবারে পৌঁছে গেলাম আসানসোল। আসানসোল থেকে Google map দেখে পুরুলিয়ার রাস্তা ধরলাম। 

Plan অনুযায়ী প্রথমেই যাচ্ছি গড় পঞ্চকোট। আসানসোল-পুরুলিয়া রোড ধরে যখন এগোচ্ছি, রাধামাধবপুর পেরোনোর পর থেকেই পঞ্চকোট পাহাড়ের দৃশ্য রাস্তার ডানদিকে দেখতে পাচ্ছিলাম। পাহাড়ের আহ্বানে রঘুডি পৌঁছানোর পর Google map দেখে ডান দিকে turn নিলাম। আর তারপরেই আকাশে কালো করে মেঘ দেখা দিলো। আমি ভাবছি আজ tour successful হবে না নাকি? 

Panchakot HIll

রঘুডি থেকে যতই গড় পঞ্চকোটের দিকে এগোচ্ছিলাম ফাঁকা উঁচুনিচু পিচরাস্তা আর দুপাশের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মুগধ কর দিচ্ছিল। এই মনোমুগ্ধ্কার রাস্তার একটি ভিডিও নিচে দিলাম দেখবে। 

গড় পঞ্চকোটের সামনে যখন পৌঁছালাম আকাশে তখন ঘন মেঘ করে এসেছে আর সেই মুহূর্তে গড় পঞ্চকোটের অপরূপ শান্ত রূপ দেখে আমি তো গাড়ি থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সুন্দরী পাহাড়ি প্রকৃতির এই মোহময়ী রূপ আমি আগে দেখি নাই। আমি ভাবছিলাম যে আজ বৃষ্টি হবে বলে আসব না কিন্তু আজ না এলে এই রূপ আমি কি দেখতে পেতাম?

Garh Panchakot

গড় পঞ্চকোট পৌঁছে গাড়ি রাখার পর শুরু হল বৃষ্টি। ঘড়িতে এখন সময় - সকাল ৭:৩০। আমি একটা টিনের shed এর নিচে দাঁড়ালাম। চারিদিকে কেউ কোথাও নেই। এই নির্জন শান্ত প্রকৃতির কোলে একা দাঁড়িয়ে বৃষ্টির মুহূর্ত উপভোগ করতে বেশ ভালো লাগছিল। সত্যিই বৃষ্টি হবে বলে যদি না আসতাম এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য miss করে যেতাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই বৃষ্টি ছেড়ে গেল। পাহাড়ের মাথার উপর দিয়ে টুকরো মেঘ ভেসে ভেসে যেতে লাগল। আমি ও এবার চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করলাম। 

Purulia town থেকে ৬০ কিমি দূরে অবস্থিত নেতুরিয়া ব্লকে পঞ্চকোট পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত গড় পঞ্চকোট একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান। 

পঞ্চকোট রাজবংশের রাজপুরোহিত ও সভা পন্ডিত রাখাল চন্দ্র চক্রবর্তী মহাশয় প্রণীত "পঞ্চকোট ইতিহাস" থেকে জানা যায় মহারাজ বিক্রমাদিত্যের উত্তর পুরুষ উজ্জয়িনী নগরীর ধার রাজ্যের মহারাজা জগদ্দেও সিংহের পুত্র দামোদর শেখর সিংদেও (জন্ম - ঝালদায় ৮০ খ্রিস্টাব্দে) যে "শেখর" রাজবংশের সূচনা করেছিলেন সেই রাজবংশের ৩১ তম রাজা কীর্তিনাথ শেখর ৯২৬ খ্রিস্টাব্দে রাজ্যাভিষেকের পর তাঁর রাজধানী পাড়া থেকে এই পঞ্চকোট পাহাড়ের দক্ষিণ পাদদেশে স্থানান্তরিত করেন। এখানে প্রায় ৩০ জন রাজা দীর্ঘ ৮০০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় রাজত্ব করেন। 

এরপর ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে মহারাজ শত্রুঘ্ন শেখরের আকস্মিক মৃত্যুর পর সিংহাসন নিয়ে একাধিক নৃশংস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ফলে রাজধানী প্রথমে মাহারাজনগর, তারপর ১৭৬২ - ৬৩ সালে রামবণী মৌজায়, তারপর ১৭৯৩ সালে কেসরগড় এবং অবশেষে ১৮৩২ সালে কাশীপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। 

দীর্ঘদিন ধরে এখানকার রাজধানীটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে থাকার ফলে কালের নিয়মে স্থাপত্যগুলি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। অনেকে মনে করেন বর্গী আক্রমণের ফলে এখানকার রাজধানী ধ্বংস হয় কিন্তু এখানে বর্গী আক্রমণের ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। 

বৃষ্টি থামার পর চারপাশ ঘুরে দেখতে শুরু করলাম। প্রথমেই দেখলাম প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া কল্যাণেশ্বরী মন্দির , রাজবাড়ী, রানীমহল, দরবারকক্ষ সহ আরো বিভিন্ন স্থাপত্য। 

এরপর দেখলাম পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত খুব সুন্দর টেরাকোটার কাজ সমৃদ্ধ পঞ্চরত্ন রাধাকৃষ্ণ মন্দির এবং তার পশে দুইটি জোড়বাংলা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। 

এরপর সামনের রাস্তা ধরে চারুলতা রিসর্টের দিকে এগিয়ে চললাম। যেতে যেতে রাস্তার পাশে একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেলাম। এখানে পাহাড়ের পাদদেশে একটা পুকুর আছে, যা আগে একটি বড় পরিখা ছিল। ওই জায়গা টি খুব সুন্দর, যদিও পুকুরে জল খুব কম। 

Garh Panchakot
Garh Panchakot

এখানে পঞ্চকোট পাহাড়ের উপরে আছে রঘুনাথ মন্দির।  এই ঐতিহাসিক মন্দিরটি ভগবান রঘুনাথের (বিষ্ণুর অবতার) উদ্দেশ্যে নিবেদিত। মন্দিরটি গড় পঞ্চকোট দুর্গের মধ্যে অবস্থিত, যা ৫০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের উপর নির্মিত এবং পাথরের দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত। দুর্গটি একসময় রাজপরিবার এবং তাদের কর্মচারীদের বাসস্থান ছিল। মন্দিরটি রঘুনাথ শেখর দ্বারা নির্মিত বলে মনে করা হয়। এটি পুরুলিয়া জেলার বৃহত্তম পাথর নির্মিত মন্দিরগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। মন্দিরটি খোদাই করা পাথর ব্যবহার করে নির্মিত। 

আগের পুরুলিয়া tour-এ দেখেছিলাম জয়চন্ডী পাহাড়ে উপরে ওঠার জন্য সিঁড়ি রয়েছে। এখানে সেরকম সিঁড়ি নেই। পাহাড়ের পাথরের খাঁজ বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে হবে। মাঝে মাঝে একটু একটু করে বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে উপরে উঠলাম। এই পাহাড়ে ওঠার একটি ভিডিও করেছি, নিচে দিলাম। 

পাথরের নির্মিত প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে গিয়ে দেখতে পেলাম মন্দিরটি। পাথরের নির্মিত খুব সুন্দর প্রাচীন এক ঐতিহ্যশালী মন্দির, যার অনেকটাই আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। 

রঘুনাথ মন্দির দেখার পর পাহাড়ের উপর আর একটু উপরে উঠে দেখতে পেলাম ধারা ঝরনা। মন্দির থেকে ঝরনা যাওয়ার পথ আরো খারাপ এবং সংকীর্ণ, গাছপালা জঙ্গল ঠেলে সরিয়ে এগোতে হচ্ছিল। অবশেষে পেলাম ধারা ঝরনা। এখানে দেখলাম পাহাড়ের গা বেয়ে গড়িয়ে আসার পর পাথরের নির্মিত গোমুখ দিয়ে জল বের হচ্ছে। ঝরনার জল রাজপ্রাসাদে আনার জলবাহিকা পাথরের নালার নিদর্শন।  

এবার নিচে নামতে হবে। প্রথমে কিছুদূর নামার পর বুঝতে পারলাম রাস্তা ভুল করেছি। তারপর আবার ভালো করে ভেবে রাস্তা চিনতে পারলাম এবং নিচে নেমে এলাম। নিচে নামার সময় এক-দুই বার পা পিছলে গিয়েছিল। 

নিচে নেমে আসার পর ওই চারুলতা রিসর্টের পাশে দেখলাম আখের রস বিক্রি হচ্ছে। ২০ টাকা দিয়ে আখের রস খেয়ে এগিয়ে চললাম। এবার breakfast করতে হবে। এখন ঘড়িতে সময় সকাল ১০:৩০। এখন আকাশ পরিষ্কার আর বৃষ্টি হয় নি। এবার দেখলাম tourists আসা শুরু হয়েছে। আমি বেশ ভালো সময়ে এসে ফাঁকায় ফাঁকায় ঘুরে নিলাম। 

পাহাড়ের নীচে রাস্তার ধারে এই খাবারের দোকানগুলির ambience খুব সুন্দর। আমি একটি খাটিয়ায় বসলাম। কি সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে। মনোরম আবহাওয়া। প্রথমেই order দিলাম ডিম-পাউরুটি টোস্ট আর চা। খাওয়ার পর নিলাম চপ আর মুড়ি। খাওয়াদাওয়া শেষ করে দেখলাম একজন বাচ্চা মেয়ে পলাশ ফুলের মালা বিক্রি করছে। ১০ টাকা দিয়ে একটা মালা নিলাম তার কাছ থেকে। তারপর গড় পঞ্চকোট থেকে বেরিয়ে গেলাম। 

Garh Panchakot

১১ টায় গড় পঞ্চকোট থেকে বেরিয়ে গেলাম। রাস্তার ধারেই একটা পলাশ গাছ দেখতে পেলাম। গাছের নিচে কত পলাশফুল পরে আছে। পাহাড়ের সামনে পলাশফুল হাতে নিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। কারণ আজ mainly পলাশ ফুলের জন্যই এই tour.

Garh Panchakot

এখন যাচ্ছি আজকের দ্বিতীয় গন্তব্য ভেটিগ্রাম। পলাশ ফুলের গাছ দেখতে। ভেটিগ্রাম গড় পঞ্চকোটের কাছেই, তারপর ওখান থেকে বড়ন্তি চলে যাবো। 

ঘড়িতে এখন সময় ১২ টা। ভেটিগ্রাম থেকে এখন চলে এসেছি বড়ন্তি। বড়ন্তি ড্যাম দেখতে। বড়ন্তি ড্যামের চারপাশের একটি ভিডিও করেছি, নীচে দিলাম। এখন আবার সকালের মত মেঘ করে এলো। 

মুরাডি পাহাড় ও বড়ন্তি পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত রামচন্দ্রপুর সেচ প্রকল্পের বাঁধ দ্বারা গঠিত এই শান্ত মনোরম ড্যামটি বড়ন্তি লেক বা মুরাডি লেক নামেও পরিচিত। প্রকৃতিপ্রেমীদের শান্তিপূর্ণ ভ্রমণের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত স্থান। 

এই দিকে এসেছি, তাই এখন বড়ন্তি এলাম, নাহলে বড়ন্তি আসার সময় কিন্তু এখন নয়। Best time হচ্ছে Sunset time অর্থাৎ বিকাল বেলা। মেঘলা দুপুরের বড়ন্তির কিছু ছবি নিচে দিলাম। 

দুপুর ১২:৩০ বাজছে। এবার ফিরতে হবে। আজ lunch করব আসানসোলে। বড়ন্তি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। রাধামাধবপুর এসে একটা HP Petrol pump থেকে গাড়িতে তেল ভরে নিলাম। তারপর চললাম আসানসোলের দিকে। 

পুরুলিয়া-আসানসোল রোড দিয়ে আসানসোল G.T. Road-এ ওঠার কিছু আগে বাঁদিকে সপ্তরথী ফ্যামিলি রেস্টুরেন্ট। আমার একজন friend-এর recommendation-এ আজ এখানে lunch করব। এখন দুপুর ১:৩০  বাজছে। খুব খিদে পেয়েছে। আমি order করলাম Veg Thali আর Chicken Kasha. ১৫ মিনিটের মধ্যেই খাবার চলে এল। 

খাবারের quality আর quantity সবই খুব ভাল ছিল। আজ বেশ ভালো করেই lunch করা হল। খাওয়ার পর ভিতরে কিছুক্ষন বসলাম। দুপুর ২:৩০ -এ রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোলাম। তারপর আসানসোল থেকে Durgapur expressway ধরে বিকাল ৫:৩০-এ বাড়ি চলে এলাম। 

পলাশের season-এ পুরুলিয়া tour খুব ভালো ভাবে সম্পন্ন করলাম। আজ ওই গড় পঞ্চকোট যাওয়ার পর আকাশে মেঘ করেছিল এবং বৃষ্টি হচ্ছিল বলে প্রকৃতির এক অপার্থিব রূপ উপভোগ করতে পারলাম। আজকের দিন টা ঠিকঠাকই choose করা হয়েছিল। 

আজ অনেকটা journey করলাম। এখন আমি একটু বিশ্রাম নেব। যারা আমার website-এ প্রথমবার গল্প পড়ছো, আমার এই গল্প টি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমার বাকি গল্প গুলো পড়তে ভুলো না। খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি আবার এক travel story নিয়ে। Keep visiting my website...


Share the Story

If you like this story, share this post with your friends...

Trip to Purulia - Garh Panchakot and Baranti
Classic Sarathi 23 March 2025
Archive
Trip to Kalna Rajbari Campus and Bansberia Hangseshwari Temple & Basudeba Temple
Trip to Kalna 108 Shiv Mandir & Kalna Rajbari Campus and then Bansberia Shri Hangseshwari Temple & Ananta Basudeba Temple.