13/02/2025 : Thursday
Trip No.: - 17পুরুলিয়া tour মানেই সকলের মাথায় আসে অযোধ্যা পাহাড় এবং তার আশেপাশের স্থানগুলি। অযোধ্যা পাহাড় পুরুলিয়ার একেবারে পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত এবং বর্ধমান থেকে দূরত্ব অনুযায়ী One day trip -এ সমস্ত জায়গা cover করে ফিরে আসা সম্ভব নয়। সেই জন্যেই আমি এতদিন পুরুলিয়া tour থেকে পিছিয়ে যাচ্ছিলাম।
আমি গত সপ্তাহে পুরুলিয়ার Map Computer screen-এ open করে দেখলাম পুরুলিয়ার পূর্বদিকে অনেকগুলি ভালো ভালো জায়গা আছে এবং সেগুলি বর্ধমান থেকে one day tour করাই যায়। তারমধ্যে এই আজ যেখানে প্রথম যাচ্ছি এই জয়চন্ডী পাহাড় এবং বান্দা দেউল এই জায়গা দুটি select করে ভালো করে study করে নিলাম কয়েকদিন ধরে।
এবারের tour-এর distance আগের গুলোর থেকে অবশ্যই বেশি। আমার সব firend রা, আমার বাড়ির সবাই আমাকে তো বলেছে - "স্কুটি নিয়ে আবার এতো দূর যাওয়া যায় নাকি"। ... আমি প্রথম থেকে যত tour করেছি আমাকে সবাই বলেছে যে - "স্কুটি নিয়ে এতো দূর করা ঠিক নয়। স্কুটি নিয়ে এতো দূর যাস না। গাড়ির সমস্যা হবে, আরো কত কি. ..."। কিন্তু আজ ১৬ টা tour করার পর একটা কথা বুঝেছি - তারা সবাই আমাকে negative কথা বলেছিল বলেই আমার মনের জোর বেড়েছে এবং আমার স্কুটি নিয়ে tour করা এখন নেশা হয়ে গেছে। তাদের সকলের সব negative কথাবার্তা আমার মধ্যে positibe energy তৈরী করেছে। যারা আমার আগের ১৬ টা tour-এর story পড়োনি, অবশ্যই পরে নাও: - My Travel Stories.
আজ রাত ১ টায় ঘুম থেকে উঠে সমস্ত বাড়ির কাজকর্ম সেরে স্নান করে চা-বিস্কুট-চিড়েভাজা খেয়ে ভোর ৪ টায় বাড়ি থেকে বের হলাম। বর্ধমান থেকে Durgapur expressway ধরে বুদবুদ পৌঁছে রাস্তার পাশে ১৫ মিনিটের জন্য দাঁড়ালাম। ভালোই ঠান্ডা লাগছে। আজ dry foods-এর সাথে ফ্লাস্কে করে চা করে নিয়ে বেড়িয়েছি। ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে চা-বিস্কুট খেলাম। এরপর দুর্গাপুর হয়ে পৌঁছলাম রানীগঞ্জ। সেখান থেকে বামদিকে মেজিয়ার রাস্তা ধরলাম। মেজিয়া থেকে দামোদর নদীর উপর ব্রিজ পেরিয়ে এরপর বাঁকুড়া-সালতোরার রাস্তা ধরলাম। সালতোরা ঢোকার পর রাস্তার পাশে পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য শুরু হল। Google map দেখে এগিয়ে চললাম পুরুলিয়ার দিকে।

সালতোরার পর একজায়গায় আবার রাস্তার পাশে দাঁড়ালাম। আবার ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে চা খেতে খেতে কিছুক্ষন ছবির মত পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করলাম। তারপর দুর্গাপুর-পুরুলিয়া-রঘুনাথপুর রোড ধরে Google map দেখে খুব সহজেই পৌঁছে গেলাম আজকের প্রথম গন্তব্য - জয়চন্ডী পাহাড়। ঘড়িতে এখন সময় সকাল ৮ টা।
এই প্রথম একা গাড়ি চালিয়ে পুরুলিয়া এলাম। সালতোরা থেকে যতই পুরুলিয়ার দিকে এগোচ্ছিলাম রাস্তার দুপাশে পাহাড়ের দৃশ্য একেবারে ছবির মত লাগছিল। যেন মনে হচ্ছিল পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এর আগে গাড়ি নিয়ে এতো জায়গায় গেছি কিন্তু এই শীতের সকালে এই সুন্দর প্রকৃতির কোলে এই পুরুলিয়ার ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালানোর এই মধুর মুহূর্ত যেন আমার জীবনের এক বিশেষ স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল। যেন মনে হচ্ছিল মন ভালো করার এক প্রাকৃতিক মহৌষধ। মনে হচ্ছিল এই পথ যেন না শেষ হয়।
সকাল ৮ টায় জয়চন্ডী পাহাড় পৌঁছে গেলাম। পাহাড়ের নিচে ফাঁকা জায়গায় একটা গাছের নিচে গাড়ি রাখলাম। এখন -এর ভিড় নেই। জয়চন্ডী পাহাড়ের উপর জয়চন্ডী মন্দির আছে। পাহাড়ের নিচ থেকে উপরে জয়চন্ডী মন্দির ওঠার সিঁড়ি করা আছে।
সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে এক জায়গায় ভগ্নপ্রায় Semaphore Tower দেখতে পেলাম। Semaphore Tower হল একটি Visual telegraph বা optical telegraph system.
১৮১৬-১৮৩০ সালে ব্রিটিশরা ভারতে সেমাফোর চালু করে, যখন কলকাতা ফোর্ট উইলিয়ম এবং বারাণসীর (বেনারস) চুনার দুর্গের মধ্যে ধারাবাহিক টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এই টাওয়ারগুলি সাধারণত পাহাড়ের চূড়ায় খোলা জায়গায় অবস্থিত ছিল। এটি ভিজ্যুয়াল সিগন্যালের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণের একটি ব্যবস্থা। টেলিস্কোপের মাধ্যমে পূর্ববর্তী টাওয়ার থেকে সংকেত পর্যবেক্ষণ করা হত এবং পরবর্তী টাওয়ারে রিলে করা হত, যার ফলে যোগাযোগের একটি শৃঙ্খল তৈরি হত। টেলিগ্রাফের ব্যাপক প্রসারের আগে সামরিক ও সরকারি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত প্রাথমিক দূর-দূরান্তের যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি মূল উপাদান ছিল এই সেমাফোর টাওয়ার।
সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় মাঝে মাঝে একবার করে একটু দাঁড়াচ্ছিলাম। জলতেষ্টা পাচ্ছিল, যদিও আমি জলের বোতল সাথে নিয়েই উঠছি। সকালে অত ঠান্ডা লাগছিল কিন্তু এখন একটু গরম করছে।
সিঁড়ি দিয়ে উঠে একেবারে পৌঁছে গেলাম জয়চন্ডী পাহাড়ের উপরে জয়চন্ডী মন্দিরের সামনে। পাশে একটি বজরংবলী মন্দির ও আছে।
এই প্রথম কোনো পাহাড়ের উপর উঠলাম। যত ছোট পাহাড় ই হোক না কেন সে এক আলাদাই আনন্দ। পাহাড়ের উপর কিছুক্ষন বসে রইলাম। উপর থেকে চারপাশের দৃশ্য কি সুন্দর লাগছিল যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। কিছু ছবি দিলাম তোমরা দেখে নাও।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি কখন যে ৯:৩০ বেজে গেলো বুঝতেই পারি নাই। এবার নামতে হবে পাহাড় থেকে। ওঠার সময় যতটা কষ্ট হচ্ছিল, নামার সময় দেখলাম কিছুই মনে হচ্ছে না। পাহাড় থেকে নামার পর নিচে দেখলাম অনেকগুলি খাবারের দোকান আছে। সেখানেই এক জায়গায় breakfast সারলাম। কচুরি ও সবজির তরকারি এবং চা খেলাম। খাবারের মান মোটামুটি ছিল।
ঘড়িতে এখন সময় সকাল ১০:৩০। জয়চন্ডী পাহাড় থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। এবার যাচ্ছি জয়চন্ডী পাহাড় থেকে ১৭ কিমি দূরে বান্দা দেউল দেখতে। জয়চন্ডী পাহাড় থেকে বেরোনোর পরে বান্দা যাওয়ার রাস্তা টা খুবই সুন্দর। উঁচু-নিচু ঢেউ খেলানো পুরুলিয়ার signature road. Google map দেখে বান্দা মোড় থেকে গ্রামের ভিতর একটু ঢুকে গিয়ে পেলাম প্রাচীন দেউল টি। ১১:১৫ তে বান্দা দেউল পৌঁছে গেলাম।
বান্দা দেউল হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর মহকুমার বান্দা গ্রামে (যাকে দেউলঘেরাও বলা হয়) একাদশ শতাব্দীর একটি প্রাচীন পাথুরে জৈন মন্দির। দেউল কথার অর্থ হল দেবালয় বা মন্দির।
জনশ্রুতি বা ইতিহাস ঘেঁটে যা জানা যায় তাতে এই প্রাচীন দেউলটি প্রায় নবম-দশক শতাব্দীতে নির্মিত। অতএব এটির আনুমানিক বয়স ৮০০-৯০০ বছরের ও বেশি।
কালের প্রবহমানতায় কতকিছুই বিলীন হয়ে গেছে স্মৃতির অতলে, কিন্তু প্রাচীন এই দেউলটিকে দেখে আশ্চর্য হতে হয় যখন এটির বয়স কল্পনা করি।
বান্দা দেউলের উপরে একটি আলংকারিক চূড়া রয়েছে । ভেতরের অংশটি বর্গাকার এবং একটি আয়তাকার মুখমন্ডপ। মন্দিরের একটি মণ্ডপ ছিল যা বেশিরভাগ অংশে ভেঙে পড়েছে। এই বান্দাদেউলটি মূলত স্যান্ড স্টোন দিয়ে নির্মিত। অতি সূক্ষ এবং নিপুণ শিল্পকলা এটির পরতে পরতে লক্ষ্য করা যায়। পাথরের উপর পাথর বসিয়ে এমন নিখুঁত স্থাপত্য যে বানানো যায় তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। বান্দা দেউলের সামনে একটি পাথরের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যার ছাদ পাথরের স্তম্ভ দ্বারা সমর্থিত। পরিত্যক্ত বান্দা দেউল পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অংশের গৌরবময় জৈন ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
বান্দার পুরাতন এই মন্দিরটি ASI-এর তালিকাভুক্ত স্মৃতিস্তম্ভ। ১৮৭২ সালে, প্রত্নতাত্ত্বিক জে.ডি.বেগলার এই মন্দিরটি দেখতে পান, তখন এটি একটি বনের গভীর গাছপালায় ঢাকা ছিল। এটি মূলত একটি জৈন দেউল। সম্ভবত জৈন ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে এই দেউল স্থাপিত হয়।
দেউলের বাইরের দেওয়ালে একটি করে বড় বড় কুলুঙ্গির মত লক্ষ্য করা যায়, এবং এগুলি দেখে অনুমান করা যায় এগুলিতে দেবতাদের বিগ্রহ বসানো ছিল যা কালের প্রবাহে হারিয়ে গেছে। দেউলের গর্ভগৃহে প্রবেশ করলেই দেখা যায় প্রায় চৌকাঠ থেকে তিন ফুট দূরে একটি বেদি যদিও সেখানে বর্তমানে কোন বিগ্রহ নেই।
এখন ঘড়িতে সময় সকাল ১১:৪০। আজকের পুরুলিয়া tour এই পর্যন্তই। কিছুদিন পর আবার একটা পুরুলিয়া tour করব। এবার ফেরার পালা। আবার সেই যে রাস্তায় এসেছি ওই রাস্তা দিয়েই ফিরছি রাস্তার পাশে পাহাড় দেখতে দেখতে। এখন ভালোই গরম করছে।

সালতোরা থেকে মেজিয়া হয়ে রানীগঞ্জ পৌঁছানোর পর একটা কেক খেলাম। তারপর ওখানে একটা Indian Oil পেট্রল পাম্প থেকে গাড়িতে অল্প তেল ভরে নিলাম। তারপর ওখান থেকে ধরে চলে এলাম অন্ডাল। ওখানে রাস্তার পাশে একটা ধাবা থেকে ভাত খেয়ে নিলাম। Chicken Thali. তারপর একটানা বাড়ি চলে এলাম। সকালে যাওয়ার সময় যেরকম ঠান্ডা লাগছিল ফেরার সময় ভালোই গরম করছিল।
বিকাল ৪ টায় বাড়ি চলে এলাম। Overall road experience and Driving experience তো খুবই ভালো ছিল। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পুরুলিয়ার ওই উঁচু নিচু ঢেউ খেলানো রাস্তা খুব ভালো লাগল। first time পাহাড়ে উঠলাম, বেশ ভালোই tour হল আজ।
এখন একটু বিশ্রাম নেব। তোমরা যারা এখনো আমার বাকি ১৬ টা tour-এর গল্প পড়োনি তারা অনেক কিছু miss করছ। তাই আর দেরি না করে এক্ষুনি পরে ফেলো। আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি নতুন travel story নিয়ে। Keep visiting my website.