Skip to Content

Trip to Raipur Jamidar Bari

Trip to Raipur Jamidar Bari (Raipur Rajbari), Birbhum.

23/02/2025 : Sunday

Trip No.: - 19

আগের সপ্তাহে Google map দেখতে দেখতে বীরভূমের এই প্রাচীন জমিদারবাড়ি টি দেখতে পাই। কয়েকটি ছবি দেখে জায়গা টি বেশ মনে ধরে যায়। তখন এটা নিয়ে একটু study করে জানতে পারি, এখানে অনেক বাংলা চলচিত্রের shooting হয়েছে, যেমন - পরিচালক মৃনাল সেনের "খন্ডহর" (১৯৮৪), পরান বন্দোপাধ্যায় অভিনীত "যেখানে ভূতের ভয়"(২০১২)। 

সতরাং এখানে তো একবার ঘুরতে যেতেই হয়। তাই সমস্ত planning করে আজ finally যাচ্ছি বীরভূমের সেই "রায়পুর জমিদার বাড়ি"। 

যে রাস্তা দিয়ে আগের বোলপুর -এ গেছিলাম, ওই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে; এটা বোলপুরের পাশেই। সুতরাং, বাড়ি থেকে সকাল ৭ টায় বেরিয়ে বর্ধমান থেকে নবাবহাট হয়ে গুসকরা রোড ধরলাম। সেখান থেকে পৌঁছালাম শিবপুর চৌমাথা। এখন থেকে বাম দিকে নিলাম। সেখান থেকে রায়পুর যাওয়ার পর আবার বাঁ দিকে গ্রামের ভিতর ঢুকলাম। Google map দেখে সকাল ৮:৪৫ -এ পৌঁছে গেলাম জমিদার বাড়ির সামনে। এই প্রাচীন জমিদার বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি নারায়ণ মন্দির। 

Narayan temple Raipur

সেই মন্দির চত্বরে গাড়ি টা রাখলাম। গাড়ি থেকে চায়ের ফ্লাস্ক, একটা ছোট বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে পরিত্যক্ত, প্রাচীন, ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ীর দিকে এগিয়ে চললাম। 

পরিত্যক্ত জমিদারবাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখলাম চারিদিকে কেউ কোথাও নেই, ফাঁকা। ঠিক আমি যেরকম ambience চেয়েছিলাম। দেখলাম মাথার উপর দিয়ে কিছু পায়রা উড়ে গেল। বেশ একটা গা ছমছম পরিবেশ। 

আমি এক জায়গায় একটু বসলাম। ফ্লাস্ক থেকে চা ঢাললাম, বিস্কুটের প্যাকেট থেকে কয়েকটা বিস্কুট বের করলাম। এখন আমি চা বিস্কুট খেতে খেতে তোমাদের এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে দু-চার কথা বলে দিই। 

Raipur Jamidar Bari

রায়পুর জমিদারবাড়ি বা রায়পুর রাজবাড়ী বোলপুর থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে অবস্থিত একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক প্রাসাদ। এই জরাজীর্ণ অথচ মনোমুগ্ধকর স্থানটি একসময় সিনহা পরিবারের বিশাল বাসস্থান ছিল। এই ধ্বংসপ্রাপ্ত সিনহা পরিবারের রাজপ্রাসাদ ৬০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ছিল এবং এতে ছিল আশ্চর্যজনকভাবে ১২০টি কক্ষ। সিনহা পরিবার অযোধ্যা থেকে পঞ্চদশ শতকে এই রায়পুরে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন এবং জমিদারের মর্যাদা অর্জন করেছিলেন। 

পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সত্যেন্দ্র প্রসন্ন সিনহা, যিনি লর্ড সিনহা নামেই বেশি পরিচিত। ১৯০৩ সালে তিনি ভারত সরকারের স্থায়ী কাউন্সিল এবং তারপর বাংলার অ্যাডভোকেট জেনারেল (দুবার, ১৯০৭-১৯০৯ এবং ১৯১৫-১৯১৭) হিসেবে নিযুক্ত হন, যিনি এই পদের দখলকারী প্রথম ভারতীয় ছিলেন। গ্লুচেস্টার সিটিজেন সংবাদপত্রের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, মৃত্যুর সময় লর্ড সিনহার সম্পত্তির মূল্য ছিল ২২৩,৬০০ পাউন্ড, যা মুদ্রাস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য করলে আজকের বিচারে ১৪ মিলিয়ন পাউন্ডের সমান হবে!

রায়পুরের সিংহ পরিবার শান্তিনিকেতনের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। ১৮৬৩ সালে, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বোলপুরে একটি ছাতিম গাছের নীচে ধ্যানের জন্য বসেছিলেন এবং অতুলনীয় শান্তি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি গাছের চারপাশের জমিটি কিনে শান্তিনিকেতনে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জমিটি ভূবন মোহন সিংহের (সিনহা) ছিল। স্থানীয় বিশ্বাস অনুসারে, সিংহরা দেবেন্দ্রনাথকে ১ টাকা প্রতীকী মূল্যে জমিটি দিয়েছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ এই জমিতে একটি অতিথিশালা তৈরি করেছিলেন এবং এর নামকরণ করেছিলেন শান্তিনিকেতন।

স্বাধীনতার পর, ১৯৫১ সালে জমিদারি ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং এই পরিবারগুলির কাছে তাদের প্রাসাদগুলি বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। রায়পুরের সিংহরাও এর ব্যতিক্রম ছিল না এবং শীঘ্রই তাদের বিশাল প্রাসাদটি ভেঙে পড়তে শুরু করে। ১৯৭০-এর দশকে সম্পত্তিটি অবশেষে পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

তোমাদের জমিদারবাড়ির ইতিহাস বলতে বলতে আমার চা খাওয়া হয়ে গেল। চলো এবার জমিদার বাড়ি টি একটু ঘুরে দেখি। তোমরাও ছবি গুলি দেখতে থাকো। 

বাড়িটি বর্তমানে খুবই বিপদজনক। অনেক জায়গা ভেঙে পড়েছে। আমি সিঁড়ি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে উপর পর্যন্ত উঠেছিলাম কিন্তু তোমরা যদি কখনো যাও, আমি recommend করব উপরে উঠবে না। কারণ যেকোনো জায়গা যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। আর ভিতরে সাপেরও উপদ্রব আছে, তাই দেখেশুনে চলাফেরা করবে। 

Raipur Jamidar Bari

আমি যখন সিঁড়ির দিকে যাচ্ছিলাম, দেখলাম ভিতরের কয়েকটি ঘর একেবারে অন্ধকার, সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। আমি ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বেলে এগোচ্ছিলাম। সূর্যের আলো প্রবেশ না করার জন্য ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের উপস্থিতি এবং তার সাথে বাতাসের আর্দ্রতার কারণে ওই জায়গায় কেমন একটা bad smell পাচ্ছিলাম। 

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১০:৩০ বাজছে। এবার বাড়ি ফিরতে হবে। এই প্রাচীন রাজবাড়ী টি দেখে কারোর ভূতুড়ে মনে হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে ফেব্রুয়ারীর সকালে এই রাজবাড়ী যেন রহস্যের বাতাস ছড়িয়ে দিল।ধ্বংসাবশেষগুলি দেখে এক নীরব, অকথিত গল্প বলে মনে হচ্ছিল - যা কখনো কেউ শুনতে চায় নি। 

Raipur Jamidar Bari

রায়পুর থেকে বেরিয়ে একেবারে চলে এলাম গুসকরা পেরিয়ে ওড়গ্রামে "হোটেল খোয়াই"। এখানে breakfast করব। কালোজিরে দিয়ে লুচি, ছোলার ডাল, ডিমের ওমলেট খেয়ে ওখান থেকে বাড়ি চলে এলাম। বাড়ি এলাম দুপুর ১২:৪৫ -এ। 

আজ গল্প এই পর্যন্তই। খুব তাড়াতাড়ি আসছি পরের travel blog নিয়ে। Keep visiting my website.


Share the Story

If you like my story, share this post with your friends...

Trip to Raipur Jamidar Bari
Classic Sarathi 23 February 2025
Archive
Trip to Sat Deule in Memari
Trip to Sat Deule near Memari in Purba Bardhaman.