Skip to Content

Trip to Rakhal Raja Mandir at Gopaldaspur

Trip to Rakhal Raja Mandir at Gopaldaspur and then lunch at Memari Asirbad Biriyani.

18/04/2025 : Friday

Trip No.: - 23

গত ১৫ই এপ্রিল গুসকরায় "চাঁদনি জলটুঙ্গি"-তে একটা tour program ছিল। কিন্তু তার আগের রাত থেকে হঠাৎ আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি, সেই কারণে tour cancel করতে হয়। এখনো শরীর পুরোপুরি সুস্থ হয় নি। কিছুদিন complete bed rest -এ ছিলাম। যাইহোক, এই tour টা আবার পরে কখনো করব। 

গতকাল দুপুরে ভাবছিলাম কাছাকাছি কোথাও একটু ঘুরে আসি। কারণ এখন বেশি দূর journey করা ডাক্তারের নিষেধ আছে। গতকাল দুপুরে Google map খুলে বসে পড়লাম বর্ধমানের কাছাকাছি ভালো ঘোরার জায়গা খুঁজে বের করতে। একটু খুঁজেই পেয়ে গেলাম নিমোর কাছে গোপালদাসপুরে এই রাখাল রাজা মন্দির। জায়গা টা map-এ দেখে বেশ ভালো লাগল। সাথে সাথেই সমস্ত রকম study করে tour plan করে ফেললাম। Weather report-এ সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে দেখলাম।

আজ বাড়ি থেকে সকাল ৮:৩০ -এ বেরোলাম। বাড়ি থেকে breakfast করেই বেড়িয়েছি। বর্ধমান থেকে এই রাখাল রাজা মন্দিরে আসার ৩টি route রয়েছে। 

  1. বর্ধমান থেকে হাটগোবিন্দপুর-সাতগাছিয়া-শঙ্করপুর হয়ে বৈদ্যপুর-গোপালদাসপুর 
  2. বর্ধমান থেকে রসুলপুর-মেমারী-শঙ্করপুর হয়ে বৈদ্যপুর-গোপালদাসপুর
  3. বর্ধমান থেকে রসুলপুর-মেমারী-বৈঞ্চি হয়ে বৈদ্যপুর-গোপালদাসপুর

আমি দ্বিতীয় route টা দিয়েই যাবো। এদিকে সময় কিছুটা কম লাগবে। কিছু জায়গা রাস্তা খারাপ থাকলেও বাকি রাস্তা খুব ভালো। 

সকাল ৮:৩০-এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে Google map দেখে বর্ধমান থেকে রসুলপুর-মেমারী-শঙ্করপুর হয়ে গোপালদাসপুর যখন এসে পৌঁছালাম রাস্তার ডান দিকে রাখাল রাজা মন্দিরের গেট (Gateway of Rakhal Raja Temple) দেখতে পেলাম। সেদিক দিয়ে রাস্তা নিলাম। এই রাস্তাটা ঢালাই রাস্তা এবং খুবই সংকীর্ণ। কিছুটা যাওয়ার পর রাখাল রাজা মন্দিরে পৌঁছে গেলাম। সামনে বড়ো মাঠ। গাড়ি পার্কিংয়ের প্রচুর space, এবং free parking. ঘড়িতে এখন সময় সকাল ১০ টা। আমি একটা গাছের নিচে গাড়ি রাখলাম। 

".... হরে কৃষ্ণ নাম দিল প্রিয় বলরাম
রাখাল রাজা নাম রাখে ভক্ত শ্রীদাম ......"

Rakhal Raja Mandir

রাখাল রাজা মন্দির হল কালনা ২ নম্বর ব্লকের বৈদ্যপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালদাসপুর গ্রামে অবস্থিত এক সিদ্ধপীঠ। এই মন্দির তৈরি হয়েছিল ষোড়শ শতকে এক সিদ্ধ বৈষ্ণব পুরুষ রামকানু গোস্বামীর মাধ্যমে।

কাটোয়ার খট্টোগ্রামের বাসিন্দা রামকানু গোস্বামী ছিলেন গোপীনাথের পরম ভক্ত। সেখানে তিনি এক শুদ্র ব্যক্তিকে দীক্ষা দেওয়ার অপরাধে স্ত্রীকে নিয়ে গ্রাম ত্যাগ করেছিলেন। এরপর তিনি বর্তমানে গোপালদাসপুরে এসে হাজির হন। সেখানে দেওয়ান জী নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় হয় রামকানুর। তখন দেওয়ান জী রামকানুকে কিছু জমি দান করেন। সেখানে তিনি মাধুকরি করে সংসার চালাতো।  কালক্রমে রামকানুর তিন সন্তান হয়। তাদের নাম রাখেন নিমাই চাঁদ, বলদেব ও ছোট ছেলে রাখাল। একদিন রামকানু পুজো করার জন্য ফুল তুলতে গিয়েছিলেন। গিয়ে দেখেন মাধবীফুল গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, অন্য কোনও গাছে একটিও ফুল ফোটেনি। ফুল না পেয়ে প্রচন্ড রেগে যান তিনি। মাধবী ফুল গাছ নষ্টের কথা ছেলেদের কাছে জানতে চাইলে কোনও সদোত্তর পান নি তিনি। তাতেই বেজায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন রামকানু। ক্ষোভে রামকানু অভিশাপ দেন - যে তার ফুলগাছ নষ্ট করেছে তার তিনদিনের মধ্যে মৃত্যু হবে।

কথিত আছে, তিনি বাকসিদ্ধ ছিলেন। অজান্তে দেওয়া তাঁর অভিশাপে তিন দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর নিজেরই ছোট ছেলে রাখলের। শোকে মগ্ন ওই সিদ্ধপুরুষ এতে সংসার ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে বৃন্দাবনের পথে রওনা হয়েছিলেন। যাত্রার মাঝে ক্লান্ত হয়ে মাঝ পথে একটি গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন রামকানু। সেই সময়ে স্বপ্নাদেশে শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে জানিয়েছিলেন, তিনি যেন বৃন্দাবনের উদ্দেশ্যে না গিয়ে গৃহে ফিরে যায়। 

"জঙ্গলের ভিতর এক পুষ্করীনির মধ্যে একটি নিমকাঠ ভাসছে সেটি তুলে নিয়ে আমার বিগ্রহ নির্মাণ করো, ওখানেই আমার মন্দির প্রতিষ্ঠা করো, আর এই মন্দিরে আমি রাখাল রাজা নামেই পুজিত হবো"

সেই অনুযায়ী তৈরি হয় মূর্তি। স্বপ্নাদেশের নির্দেশমতোই বিগ্রহের অভিষেক করা হয়েছিল। সেই রীতি আজও এই মন্দিরে বজায় আছে। প্রতি মাঘী পূর্ণিমায় এখানে বিগ্রহের অভিষেক করা হয়। এই মন্দির রাখালরাজার মন্দির নামে পরিচিত হলেও, এখানে রয়েছে গোপীনাথের বিগ্রহও। যা গোস্বামীদের পারিবারিক বিগ্রহ।

কথিত আছে, স্থানীয় জমিদার গোপালদাস দীর্ঘদিন ধরে ইজারা নিয়ে রাখা তাঁর ওই জঙ্গলে লোকজন নিয়ে আচমকা পরিদর্শনে আসেন। তিনি দেখতে পান, সেখানে বিনা অনুমতিতে তাঁর জঙ্গলে রামকানু গোস্বামী ও তাঁর স্ত্রী কুটীর ও মন্দির বানিয়ে পুজোপাঠ করছেন। 

জমিদার নিজের পরিচয় দেওযার পর তাঁদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছিলেন গোস্বামী দম্পতি। তাঁদের স্বল্প প্রসাদেই জমিদার ও তাঁর সঙ্গে থাকা বিপুলসংখ্যক লোকজনের পেট অলৌকিকভাবে ভরে গিয়েছিল। সেই অলৌকিক শক্তির পরিচয় পেয়ে জমিদার ওই গোটা গ্রামটিই গোস্বামী দম্পতিদের দিয়ে দেন। নিজের নাম অনুসারে ওই গ্রামের নাম দেন গোপালদাসপুর।

পরবর্তী সময়ে এই মন্দিরের খ্যাতি বাড়তে থাকায় ব্রজপুরের দেবীগোপাল পাঁজা নামে এক ভক্ত বড় আকারে মন্দিরটি বানিয়ে দিয়েছেন। মন্দিরের নীচেই রয়েছে ওই বৈষ্ণব সিদ্ধপুরুষ রামকানু গোস্বামীর সমাধি।

কথিত আছে, এই মন্দিরে আজও ভগবানের কাছে যা প্রার্থনা করা হয়, সব মনস্কামনা পূরণ হয়।

বৃন্দাবনের নিধিবনের মতো এখানেও সূর্যাস্তের পর এই মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ। লোক মুখে শোনা যায়, নিধিবনে যেমন রাত গভীর হলেই রাসলীলায় মাতেন কৃষ্ণ; ঠিক তেমনই সূর্যাস্তের পর এখানে ধেনুদের নিয়ে চড়ান রাখাল রাজা। তাই অন্ধকার নামলেই শুধু মানুষ কেন মন্দির প্রাঙ্গণে থাকতে পারে না কেউই। 

শুধু জন্মাষ্টমী নয়, দোল পূর্ণিমা থেকে শুরু করে মাঘী পূর্ণিমা বেশ ধুমধাম করেই পুজো হয় এই মন্দিরে।

আমি যখন সকাল ১০ টায় মন্দির চত্ত্বরে পৌছালাম দেখলাম খুব একটা বেশি ভিড় নেই। আমি চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। শুনলাম সকাল ১১ টায় মূলমন্দিরের গেট খোলা হবে। খুবই স্নিগ্ধ মনোরম খোলা মেলা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। ভাষায় বলে প্রকাশ করা যাবে না। একঘেঁয়ে জীবন থেকে একটু মুক্তি পাওয়ার জন্য এটা খুব সুন্দর এক জায়গা।

মন্দির চত্ত্বরে পূজার সামগ্রী ও কিছু খাবারের দোকান আছে। মন্দিরে দুপুরে অল্প টাকার বিনিময়ে অন্ন-ভোগেরও ব্যবস্থা আছে। 

মূলমন্দিরটি জোড়বাংলা মন্দির শৈলীর এবং তার পাশে একটি দেউল মন্দির বিদ্যমান। মন্দির চত্ত্বরে একটি জলাশয় আছে। শ্রীকৃষ্ণ লীলার বিভিন্ন মূর্তি ও আছে চারপাশে। 

তবে, সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল এখানে থাকা বটবৃক্ষগুলি যারা ঢেউয়ের মত শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে এক অপূর্ব শোভার সৃষ্টি করেছে। এই বটবৃক্ষ গুলির জন্য গ্রীষ্মের দিনেও এখানে এসে শান্তি পাওয়া যাবে। 

চারিদিকে ঘুরে যখন বটগাছের নীচে বসে আছি অন্ধকার করে মেঘ করে এল আর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আরম্ভ হল। মন্দির সংলগ্ন নাটমন্দিরে উঠে এলাম। সেখানে তখন ভজন কীর্তন হচ্ছিল। চারিদিকে সবুজের সমারোহ আর পাখির কলরব সেই কীর্তনের ধ্বনিকে আরো শ্রুতি মধুর করে তুলেছিল। কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হল বজ্র বিদ্যুৎ সহ মুসলধারে বৃষ্টি। কীর্তন ও থেমে গেল। এখন ঘড়িতে সময় ১০:৩০। 

Rakhal Raja Mandir

সকাল ১১:১৫ তে মূলমন্দিরের দ্বার খোলা হল। বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমে এলেও বৃষ্টি তখন ও হচ্ছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পেলাম। ১৫-২০ মিনিট পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণামৃত এবং ফলপ্রসাদ দেওয়া হল। ফলপ্রসাদ গ্রহণ করে নাটমন্দিরে আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম বৃষ্টির জন্য। 

দুপুর ১২ টায় বৃষ্টি ছাড়ল। বাইরে বেরিয়ে দেখি বৃষ্টির পর মন্দির চত্ত্বরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে। আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। এক অদ্ভুদ নীরবতা যা মনকে একেবারে শান্ত করে দেয়। আজ এখানে অন্নভোগ গ্রহণ করলাম না, আবার একদিন বাবা-মা কে নিয়ে আসব, সেদিন অন্নভোগ গ্রহণ করব। 

একঘেঁয়ে জীবন থেকে কিছুক্ষন এর জন্য মুক্তি পেতে এই স্নিগ্ধ মনোরম খোলা মেলা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তোমরা অবশ্যই একবার হলেও এসে ঘুরে যাও। অবশ্যই সকাল ১০ টার দিকে আসবে। ছুটির দিন একটু ভিড় থাকে। গাড়ি নিয়ে এলে আগেই বলেছি parking-এর অনেক space আছে। আর যারা ট্রেনে করে আসতে চাও বর্ধমান-হাওড়া mainline local-এ চেপে বৈঞ্চি স্টেশনে নেমে টোটো করে প্রথমে আসতে হবে তালার মোড় তারপর সেখান থেকে আবার টোটো করে গোপালদাসপুর রাখাল রাজা মন্দির। 

দুপুর ১২ টার পর গোপালদাসপুর রাখালরাজা মন্দির থেকে বেরোলাম। এর পর যাবো রসুলপুরে আমার এক বন্ধু ভাস্করের বাড়িতে। গোপালদাসপুর থেকে মেমারী তে এসে মেমারীর "আশীর্বাদ বিরিয়ানি" থেকে আমাদের দুজনের জন্য চিকেন বিরিয়ানি নিয়ে নিলাম। 

রসুলপুর ঢোকার সাথে সাথেই হালকা বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। ভাস্করের বাড়ি পৌঁছানোর পর আবার প্রচন্ড বৃষ্টি আরম্ভ হল। এখন বাজে দুপুর ১ টা। এই বৃষ্টির মধ্যে দুপুরে lunch-এ চিকেন বিরিয়ানি আমাদের দুজনেরই জমে গেল। খাওয়া শেষ করে ওর বাড়িতেই কিছুক্ষন বসলাম। দুপুর ২টো নাগাদ বৃষ্টি ছাড়ার পর ভাস্করের বাড়ি থেকে বেরোলাম। তারপর ২:৩০ -এ বাড়ি চলে এলাম। 

বাড়ির জন্যও বিরিয়ানি এনেছিলাম। বাড়িতে সবার "আশীর্বাদ বিরিয়ানি"-র চিকেন বিরিয়ানি বেশ ভালোই লাগল। 

আজ গল্প এই পর্যন্তই। যারা আমার website-এ প্রথমবার গল্প পড়ছো, আমার এই গল্প টি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমার বাকি গল্প গুলো পড়তে ভুলো না। খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি আবার এক travel story নিয়ে। Keep visiting my website...


Share the Story

If you like my story, share this post with your friends...

Trip to Rakhal Raja Mandir at Gopaldaspur
Classic Sarathi 18 April 2025
Archive
Trip to Hotel Labannya for Lunch
Trip to Hotel Labannya at Singur for special Lunch.