Trip to Susunia Hill in Bankura

November, 2025

শুশুনিয়া পাহাড় হল পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার সবুজ ও লাল মাটির মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের মাঝে প্রায় ১২০০ ফুট উচ্চতার একটি পাহাড়, যা তার প্রত্নতাত্ত্বিক তাৎপর্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অ্যাডভেঞ্চারের জন্য পরিচিত। এটি পূর্বঘাট পর্বতমালার অংশ এবং ট্রেকিং এবং রক ক্লাইম্বারদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

এই শুশুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশে একটি ঝর্ণা রয়েছে, বিশ্বাস করা হয় যে এর ঔষধি গুণ রয়েছে। এছাড়াও এই স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম শিলালিপি। পাদদেশে রয়েছে একটি একশিলা পাথরের নৃসিংহ মূর্তি। তাই এই শুশুনিয়া পাহাড় প্রত্নতত্ত্ব এবং প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

গত ২২শে নভেম্বর শনিবার ঘুরে এলাম শুশুনিয়া পাহাড় থেকে। আজ তোমরা পড়বে সেদিন শুশুনিয়া পাহাড়ে আমার অভিজ্ঞতা কেমন হলো। তাহলে চলো গল্পের মাধ্যমে আর একবার ঘুরে আসা যাক বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড় থেকে। 

২২শে নভেম্বর ভোর ৫টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে বর্ধমান থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দুর্গাপুর ঢোকার আগে যখন টোল প্লাজা পার করলাম তখন ঘড়িতে সময় সকাল ৬:৩০। ঠান্ডা ভালোই লাগছিলো এবং রাস্তায় ভালোই কুয়াশা করেছিলো। তারপর সেখান থেকে দুর্গাপুর ব্যারেজের দিকের রাস্তা ধরলাম। ব্রিজ পেরিয়ে ডানদিকে নদীর পাশের রাস্তা ধরলাম। সেখান থেকে মালিয়ারা, দুর্লভপুর হয়ে দুর্গাপুর-পুরুলিয়া-রঘুনাথপুর রোড ধরে কিছুদূর গিয়ে শুশুনিয়া রোড ধরলাম। অবশেষে সকাল ৮:৩০-এর কিছু আগে শুশুনিয়া পাহাড় পৌঁছে গেলাম। 

শুশুনিয়া পাহাড়ের সামনে দেখলাম কয়েকজন পিকনিক করতে এসেছেন।

শুশুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশে একটি ঝর্ণা রয়েছে। স্থানীয়রা এই ঝর্ণাটিকে পবিত্র বলে মনে করেন, অনেকে বিশ্বাস করেন যে এই জলের ঔষধি গুণ রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে সিংহের একটি পাথরের মূর্তির মুখ থেকে এই জল বেরিয়ে আসে। এই জলের মধ্যে উচ্চ খনিজ উপাদান আছে। 

এখন তোমরা হয়তো ভাবছো পাহাড়ে এই জল কোথা থেকে আসছে? অনেকেই আমাকে আগে প্রশ্ন করেছে শুশুনিয়া পাহাড় থেকে এই জল কিভাবে ঝরে পড়ে? শুশুনিয়া পাহাড়ের জলধারার পিছনের বিজ্ঞানটি পাহাড়ের অনন্য ভূতাত্ত্বিক গঠনের মধ্যে নিহিত। তাহলে চলো দেখা যাক কীভাবে তৈরী হল এই জলধারা?

এই ঝর্ণার সামনে একটি উন্মুক্ত নৃসংহ মন্দির দেখতে পেলাম। এখানে রয়েছে নৃসিংহের একশিলা পাথরের মূর্তি। পাশে একটি কালী মন্দির এবং একটি দুর্গামন্দির ও আছে। 

নৃসিংহ মন্দিরের পাশে আমার গাড়ি পার্ক করে সামনে একটি দোকান থেকে গরম চা খেয়ে শীতের সকালে শরীরকে একটু সতেজ করে সকাল ৯ টায় পাহাড়ে ওঠা শুরু করলাম। সাথে একটি ছোট ব্যাগে নিলাম জলের বোতল, রুমাল, কিছু চকোলেট, ক্যামেরা, টুপি। যদিও সেদিন সকালে তেমন রোদের তাপ ছিলনা তাই টুপি ব্যবহার করতে হয় নি। 

শুশুনিয়া পাহাড় দুটি অংশে বিভক্ত - ছোটো পাহাড় এবং বড়ো পাহাড়। পাহাড়ে ওঠার রাস্তায় কিছু ছোট ছোট দোকান দেখতে পেলাম যেখানে জলের বোতল, সরবত, ঠাণ্ডাপানীয়, বিভিন্ন খাবার বিক্রি হচ্ছিল। 

ছোট বড়ো পাথর পেরিয়ে উপরে ওঠার সময় মাঝে মাঝেই বসে বিশ্রাম নিতে হচ্ছিল। সেদিন ওই সময় তখনও কোনো মানুষজন কে পাহাড়ে ওঠার পথে দেখা যায় নি। পাহাড়ের উপরের দিকে অনেক বাঁদর দেখতে পেলাম। 

প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ওঠার পর ছোট পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছালাম। সেখানে একটি ওয়াচটাওয়ার দেখতে পেলাম যা ব্যবহারযোগ্য নয়। 

তারপর এগিয়ে চললাম বড়ো পাহাড়ের দিকে। সামান্য নিচের দিকে নেমে পুনরায় উপরে ওঠা শুরু হল। আরও ৪০মিনিট ওই একই ভাবে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে নিতে অবশেষে বড়ো পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছালাম। উপরে পাথর দিয়ে ঘেরা একটি উন্মুক্ত মন্দির রয়েছে। 

উপর থেকে নিচের চারদিক কুয়াশায় ঘেরা লাগছিল। উপরে কিছুক্ষন বসার পর এবার নিচে নামার পালা। 

নামার সময় বুঝতে পারলাম উপরে ওঠার থেকে নামা আরও বেশি শক্ত। ওঠার সময় মাঝে মাঝে হাঁফিয়ে যাচ্ছিলাম বলে বিশ্রাম নিতে হচ্ছিল কিন্তু নামার সময় সেটা হচ্ছিল না কিন্তু পাথরগুলির উপরিভাগ পিচ্ছিল হওয়ার জন্য সামান্য অসতর্কতায় গড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। 

একই ভাবে প্রথমে বড়ো পাহাড় থেকে ছোটো পাহাড়ের চূড়ায় এসে পুনরায় সেখান থেকে নিচে নেমে এলাম। নামার সময় অনেক মানুষজন দেখতে পেলাম যাঁরা উপরে উঠছেন। 

সকাল ৯ টায় পাহাড়ে ওঠা শুরু করেছিলাম, সকাল ১১:৩০-এ নিচে নেমে এলাম। পাহাড়ে ওঠা-নামার মুহূর্তের কিছু ছবি নিচে দিলাম। 

পাহাড় থেকে নেমে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চললাম পাহাড়ের পিছন দিকের রাস্তায়। এই রাস্তাটি একেবারে ফাঁকা এবং বেশ সুন্দর। একটি পুকুরে দেখলাম অনেক শালুক ফুল ফুটেছে। এই রাস্তা থেকে পাহাড়ের খুব সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। ক্যামেরায় তোলা কিছু ছবি নিচে দিলাম দেখো। এর পরের গন্তব্য ছিল এই পাহাড়ের উপরে থাকা রাজা চন্দ্রবর্মণের শিলালিপি দেখতে যাওয়া যা পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম শিলালিপিগুলির মধ্যে একটি। 

পাহাড়ের একেবারে পিছনে এসে পৌঁছানোর পর গাড়ি রেখে আবার পাহাড়ের পিছন দিক দিয়ে আগের মতোই উপরে ওঠা শুরু হল। এই শিলালিপিটি রয়েছে বড়ো পাহাড়ের পিছনদিকে অনেকটা উপরেই।

এখানে উপরে ওঠার সময় আগের বারের মতো বাঁদরের দেখা পাই নি কিন্তু মাঝে মাঝেই সাপের দেখা পাচ্ছিলাম। এবং এই জায়গা তা খুবই দুর্গম এবং নির্জন। কিছুদূর ওঠার পর এক জায়গায় বেশ কয়েকটি খুব সুন্দর এক প্রজাপতি দেখতে পেলাম যার নাম - Common leopard butterfly. অনেকটা উঠে আসার পর এই জায়গায় একটু বসে বিশ্রাম নিতে নিতে প্রজাপতির বেশ কয়েকটি ছবি তুললাম তারপর আর কিছুদূর উঠে গিয়ে অবশেষে দেখা মিললো পাথরের উপর সেই প্রাচীন শিলালিপিটি। শিলালিপির আশেপাশের জায়গা টি বেশ দুর্গম, সামান্য অসাবধানতায় পা পিছলে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

তবেএই জায়গার ভূমিরূপ বেশ সুন্দর। কিছু ছবি নিচে দিলাম। 

শিলালিপিটি ASI দ্বারা সুরক্ষিত। এই প্রাচীন শিলালিপির ইতিহাস সম্পর্কে দু-এক কথা তোমাদের বলি। 

শিলালিপি দেখে নিচে নেমে এলাম। শুশুনিয়া পাহাড়ের ভ্রমণ এই পর্যন্তই। এবার ফেরার পালা। খুবই ক্লান্ত লাগছিল। চোখে মুখে জল দিয়ে সাথে করে নিয়ে যাওয়া কেক, বিস্কুট খেয়ে রওনা দিলাম বাড়ির পথে। 

কিছুদূর আসার পর এক জায়গায় দাঁড়ালাম খেজুর গুড় নেওয়ার জন্য। এই সময় যারা বাঁকুড়া আসবে তোমরা দেখতে পাবে রাস্তার ধারে ধারে অনেক জায়গায় খেজুর গুড় তৈরী হয়। 

তবে আমি যাওয়ার সময় সকালেই একটি আদিবাসী বাড়িতে দেখলাম তারা বাড়ির উঠোনে খেজুর গুড় বানাচ্ছে। তখনই ভেবেছিলাম ফেরার সময় এখান থেকেই গুড় নিয়ে যাবো। 

ফেরার সময় সেই তাদের বাড়িতেই এলাম গুড় নেওয়ার জন্য। সাথে থাকা একটি ছোটো বোতলে করে গুড় নিলাম। বাড়ি এসে খেয়ে দেখেছিলাম গুড়ের quality সত্যিই খুব ভালো। 

বাড়ি ফেরার সময় মেজিয়া-রানীগঞ্জ হয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরলাম। মাঝে মেজিয়া তে দাঁড়িয়ে একবার চা এবং মুগডাল ভাজা খেলাম, তারপর অন্ডালে Hotel Highway থেকে Chicken Thali সহযোগে Lunch সেরেছিলাম। Hotel Highway-র খাবার average লাগলো, খুব একটা মন ভরেনি তাই আবার গলসিতে Suruchi Biryani থেকে half plate Chicken Biryani খেয়ে সন্ধ্যার কিছু আগে বাড়ি ফিরেছিলাম। গলসির ওখানে রাস্তার কাজ হওয়ার কারণে বেশ অনেকক্ষন রোড জ্যাম পেয়েছিলাম। 

বাড়ি ফিরে পরের দুদিন হাঁটু ও পায়ে খুবই ব্যাথা ছিল। 

এই ছিল আমার গত ২২শে নভেম্বরের শুশুনিয়া পাহাড় ভ্রমণ কাহিনী। আজ গল্প এই পর্যন্তই। শেষ করার আগে ধন্যবাদ জানাই আমার স্কুলের সহকর্মী - সুদন রায় কে, যিনি আমার যাওয়ার আগে আমাকে অনেক তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। 

যারা আমার website-এ প্রথমবার গল্প পড়ছো, আমার এই গল্প টি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমার বাকি গল্প গুলো পড়তে ভুলো না। আমার গল্প ভালো লেগে থাকলে নীচে দেওয়া Share link থেকে বন্ধুদের share করো। খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি আবার এক travel story নিয়ে। Keep visiting my website...

Share the Story

If you like my story share this post with your friends...