Skip to Content

Trip to Telovelo, Hooghly. Bhalia village - Kali Temple and Raghunath Temple

Trip to Telovelo, Hooghly. Explore History of Telovelo and see Dakat Kali Temple. Then go to Bhalia Raghunath Temple - old terracotta temple.

13/05/2025 : Tuesday

Trip No.: - 26

আনুমানিক ষোড়শ শতকে নবদ্বীপবাসী তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ প্রথম বাংলায় কালীমূর্তি স্থাপন করে পুজো শুরু করেন। তারপর যুগ যুগ ধরে পরম শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা ও গভীর ভক্তিতে এই বঙ্গভূমে মহাদেবী নিত্য পূজিতা হচ্ছেন। বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কত শত প্রাচীন কালীমন্দির। যেমন, হুগলির আরামবাগের কাছে তেলোভেলোর ডাকাত কালীর মন্দির। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন শ্রীশ্রী মা সারদা-ও।

সেই ছোটবেলায় মা সরদার জীবনী পড়তে গিয়ে পড়েছিলাম এক অলৌকিক কাহিনী। "আরামবাগের পরেই তেলোভেলোর মাঠ। তেলো আর ভেলো হল পাশাপাশি ২টি গ্রাম। একসময় তেলোভেলো ছিল ডাকাতদের ঘাঁটি। কথিত, একদিন মা সারদা ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে দেখা করতে পায়ে হেঁটে কামারপুকুর থেকে রওনা দেন। পথে ক্লান্ত মা সারদা তেলোভেলোর মাঠে ডাকাতদের খপ্পরে পড়েন। ডাকাত সর্দার মা সারদার মধ্যে নিজের আরাধ্যা দেবী মাকালীর দর্শন পান।"

গত রবিবার হঠাৎ করে সেই ঘটনার কথা কেন জানি না মাথায় এল। আর সাথে সাথেই Google map দেখে সমস্ত plan সাজিয়ে নিলাম। জায়গা টি আমার বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। 

আজ সকাল ৭:৩০ -এ ঘর থেকে বের হলাম। বর্ধমান থেকে দক্ষিণ দিকে দামোদর নদীর উপর দিয়ে কৃষক সেতু পার করে এগিয়ে চললাম। বাঁকুড়া মোড় পেরোনোর পর একটা ছাগলের সাথে আমার accident হল। ছাগলটা হঠাৎ রাস্তার বাঁদিক থেকে চলে এলো চাকার সামনে। ছাগলটা সামান্য আঘাত পেলেও আমার আর গাড়ির সেরকম কোনো ক্ষতি হয় নি। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে mind fresh করে আবার যেতে শুরু করলাম। সগড়াই মোড় পৌঁছানোর পর শ্যামসুন্দরের রাস্তা ধরলাম। শ্যামসুন্দর থেকে পহলানপুর রোড ধরলাম। Google map দেখে সকাল ৯টার কিছু আগে পৌঁছে গেলাম তেলোভালো। 

Telovelor math

প্রথমেই দেখতে পেলাম একটি মাঠ, মাঠ পেরিয়ে গাছপালায় আবৃত একটি জায়গা। সেই জঙ্গলময় জায়গার মাঝে রয়েছে ডাকাত-কালী মন্দির। উঁচু ভিতের উপর মন্দির। গর্ভগৃহে মা কালীর অপূর্ব বিগ্রহ। বস্ত্র ও অলংকারে সুসজ্জিত, নাকে টানা নথ। ভীমসর্দার ও অন্যান্য ডাকাতরা এই বিগ্রহের পূজা করতেন। 

দেখলাম মন্দিরের সামনে রয়েছে আলাদা নাটমন্দির। বলিদানের জন্য রয়েছে বিশাল এক হাড়িকাঠ। মন্দিরের পিছনে রয়েছে একটি পুকুর। তার পারে রয়েছে অনেক আমগাছ। 

এই গ্রামটির বর্তমান নাম ভালিয়া যার আগে নাম ছিল - ভেলো আর পাশের গ্রাম ছিল তেলো, বর্তমান নাম - তেলুয়া। 

ঘটনাটি বাংলার ১২৮০ সালের অল্প কিছু সময় পর। দিনটা ছিল সম্ভবত ৩রা চৈত্র। সেদিন সন্ধ্যাবেলায় এই তেলোভেলোর মাঠে ঘটেছিল অবিস্মরণীয় এক ঘটনা। 

দক্ষিণেশ্বরে রয়েছেন ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ খুব অসুস্থ তাই মায়ের মন বড়োই উদ্বিগ্ন। শ্রীশ্রী মা সারদা কামারপুকুর থেকে পায়ে হেঁটে দক্ষিণেশ্বরে যাচ্ছেন। সঙ্গে ছিলেন আরও বেশ কয়েক জন মহিলা। 

কামারপুকুর থেকে আরামবাগ কয়েক মাইল পথ। আরামবাগ থেকে তারকেশ্বরের মধ্যে পড়ে তেলোভেলোর মাঠ। এখানে ছিল ডাকাত দলের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। অনেক পথ হেঁটে মা সারদা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গীরা ভয় পান সন্ধ্যা নামলেই ডাকাতদের খপ্পরে পড়তে হবে। তাঁরা তাড়াতাড়ি হাঁটতে থাকেন। কিন্তু তাঁদের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেন না ক্লান্ত মা সারদা। তিনি নিজেই বলেন তাঁর কথা না ভেবে সঙ্গীরা যেন এগিয়ে যান। তারকেশ্বরে সবার সঙ্গে দেখা হবে। 

এদিকে, জনমানবহীন তেলোভেলোর মাঠে যখন মা সারদা ক্লান্ত হয়ে কোনো রকমে হাঁটছেন তখনই চারিদিক কাঁপিয়ে নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে শোনা যায় এক হাড় হিম করা গর্জন—“কে যায়?”। মায়ের সামনে এসে দাঁড়ায় দৈত্যাকার চেহারার ডাকাত সর্দার ভীম। কিন্তু মা সারদা তাঁকে দেখে বিচলিত হননি। শিশুসুলভ সরলতায় তিনি বলেন -"তোমার মেয়ে গো বাবা। আমি সারদা। যাচ্ছি তোমার জামাইয়ের কাছে দক্ষিণেশ্বর।" 

একথা শুনেই রুক্ষ কঠিন ডাকাত সর্দারের মনও গলে। তিনি ভাবেন এতদিন ডাকাতি করলেও কেউ তাঁকে এভাবে বাবা বলে ডাকেনি। মা সারদার মধ্যে ডাকাত সর্দার ভীম নিজের আরাধ্যা দেবী মা কালীকে দেখতে পান। মা সারদার মধুর কণ্ঠ শুনেছিলেন ডাকাত সর্দারের স্ত্রী-ও। তিনি মা সারদাকে নিজেদের কুটিরে নিয়ে গিয়ে যত্নআত্তি করেন। ঘরে ছিল মুড়িমুড়কি ও চালভাজা। তাই তিনি খেতে দেন মা সারদাকে। তৃপ্তি করে খেয়ে মাটির দাওয়াতেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন মা সারদা। পরদিন ভোরে ডাকাত সর্দার ভীম নিজেই মা সারদাকে তাঁর সঙ্গীদের কাছে পৌঁছে দেন। ডাকাত সর্দার ভীম ভাবেন বহু জন্মের পূণ্য ফলে মা ভবতারিণী নিজে এসেছেন তাঁর কাছে। এখনো মায়ের নিত্যভোগে দেওয়া হয় চালভাজা ও মুড়িমুড়কি।

এরপর সেই দম্পতি আর কোনোদিন ডাকাতি করেননি। এই ঘটনার মাধ্যমে সারদা দেবী ডাকাতদের মনের পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন এবং তাদের জীবনে নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিলেন। শোনা যায়, সেই ডাকাত দম্পতি পরে অনেকবার দক্ষিনেশ্বরে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রী মা সারদার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। 

মন্দিরের সামনে গাছের নিচে বসার জায়গা করা রয়েছে। এখন এই চত্ত্বরে কেউ কোথাও নেই। গতকাল বৃষ্টি হয়েছে। আজ সকালে এই গাছপালায় আবৃত জায়গা টা বেশ মনোরম লাগছে। 

মন্দির দর্শন করে আমি এই গাছের নীচে বসার জায়গায় বসলাম। রাতে বৃষ্টির পর সকালের শান্ত প্রকৃতির কি সুন্দর রূপ, যা মন কে ভালো করে দেয়। চারপাশে কেউ কোথাও নেই। বেশ একটা গা ছমছমে পরিবেশ। এইভাবে বসে থাকতে থাকতে কখন যে ৩০ মিনিট কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। 

গাছপালায় আবৃত মন্দির চত্ত্বর থেকে বেরিয়ে এবার চললাম ভালিয়া সারদা সংঘ আশ্রমের দিকে। ভিতরে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম অনেক গাছপালা দিয়ে সাজানো প্রাঙ্গন, বেশিরভাগ ই ফুলগাছ। মন্দিরের ভিতরে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, শ্রী শ্রী মা সারদা এবং স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি পাশাপাশি রয়েছে। মন্দিরের বাইরে গেটের পশে রয়েছে ডাকাত দম্পতির মূর্তি। 

ভালিয়া সারদা সংঘ থেকে বেরিয়ে এবার দেখে যাচ্ছি ভালিয়া গ্রামের একটি প্রাচীন টেরাকোটা মন্দির দেখতে - রঘুনাথ মন্দির।

এই মন্দিরটি স্থানীয় চক্রবর্তী বংশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। দৈর্ঘে ৭ মি, প্রস্থে ৬ মি। নির্মাণকাল প্রতিষ্ঠাফলক অনুযায়ী ১৬৯৫ শকাব্দ অর্থাৎ ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দ। (মন্দিরে একটি প্রতিষ্ঠাফলক আছে।) নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য লিখিত 'হুগলী জেলার পুরাকীর্তি' গ্রন্থে নির্মাণকাল ১৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দ বলে উল্লেখ আছে। DAVID J. McCUTTCHION তাঁর 'Late Mediaeval Temples of Bengal' গ্রন্থে ১৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দ বলে উল্লেখ করলেও সঙ্গে একটি জিজ্ঞাসা চিহ্ন যোগ করেছেন।

রঘুনাথ মন্দিরটি উচ্চ ভিত্তিবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত, পূর্বমুখী, ত্রিখিলান প্রবেশপথযুক্ত ও আটচালা শৈলীর। মন্দিরের সামনে অলিন্দ। মন্দিরের সামনের দেওয়াল 'টেরাকোটা' অলংকারে অলংকৃত। টেরাকোটার বিষয়বস্তু : রামরাবণের যুদ্ধ, কৃষ্ণলীলা, দেবদেবী, সঙ্গিনীসহ পুরুষ, নৌকা বিলাস, বন্দুক হাতে সাহেব, নাচের ভঙ্গিমা ইত্যাদি। গর্ভগৃহে ঢোকার একটিই দরজা। গর্ভগৃহে শ্রীশ্রী রঘুনন্দন (নারায়ণ শিলা) নিত্যপূজিত।

আজকের ঘোরাঘুরি এই পর্যন্তই। ভালিয়া গ্রাম থেকে যখন বেরোলাম ঘড়িতে সময় সকাল ১১ টা। ওখান থেকে শ্যামসুন্দর স্টেশন পৌঁছে ওখানে রাস্তার ধারে ছাতুর সরবত খেলাম। তারপর গাড়ি start দেব এমন সময় আমার স্কুলের সহকর্মী সুদন রায় আমাকে হঠাৎ করে ফোন করলেন। কিছু কথার পর জানতে পারলাম উনিও ওনার একটি ব্যক্তিগত কাজে শ্যামসুন্দরেই এসেছেন। ওনার সাথে শ্যামসুন্দরে দেখা করলাম। 

ওনার সাথে আমার এই tour নিয়ে অনেক গল্প হল। সুদন স্যার আমাকে প্রথমে চা ও পরে আইসক্রিম খাওয়ালেন। এই part টা plan-এর মধ্যে ছিলনা, হঠাৎই হল। সুদন স্যারের সাথে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে খুব ভালো লাগল। গরম চা এর সাথে ঠান্ডা আইসক্রিম খাওয়ার পর যখন দেখলাম পেটের ভিতরের তাপমাত্রার কোনো পরিবর্তন হলো না 🤣 তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর ১২টা বাজছে। এবার বাড়ি ফিরতে হবে। আমি উঠে পড়লাম, তারপর ওখান থেকে বাড়ি চলে এলাম। 

আজ গল্প এই পর্যন্তই। যারা আমার website-এ প্রথমবার গল্প পড়ছো, আমার এই গল্প টি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমার বাকি গল্প গুলো পড়তে ভুলো না। আমার গল্প ভালো লেগে থাকলে নীচে দেওয়া Share link থেকে বন্ধুদের share করো। খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি আবার এক travel story নিয়ে। Keep visiting my website...


Share the Story

If you like my story, share this post with your friends...

Trip to Telovelo, Hooghly. Bhalia village - Kali Temple and Raghunath Temple
Classic Sarathi 13 May 2025
Archive
Trip to Panihati Baro Mandir Ghat and Chakdaha Roy Bari
Trip to Panihati Baro Mandir Ghat, Khardaha and then Chakdaha Roy Bari - old Jamidar Bari.