15/08/2025 : Friday
Trip No.: - 30আজ ১৫ই আগস্ট, ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস। গতকাল ১৪ই আগস্ট আমার গাড়ির (Honda Dio 125) এক বছর পূর্ন হল। আজ যে জায়গায় যাচ্ছি এখানকার tour plan আগেই করা হয়ে গিয়েছিল। তোমরা সবাই জানো আমি last tour করেছিলাম ২৮শে মে। অনেকদিন পর আজ আবার বেরিয়ে পড়লাম। গত দেড়মাস একটানা বৃষ্টির পর এই কিছুদিন আবহাওয়া একটু ভালো আছে। বর্ষার পর জঙ্গলের সৌন্দর্য অনেকটাই বেড়ে যায় তা তোমরা সবাই জানো, আর তোমরা এটাও জানো জঙ্গল আমার বরাবরই ভালো লাগে। আজ তাই একটু জঙ্গলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। আজকের destination ভালকী মাচান।
আজ সকাল ৭টায় ঘর থেকে বেরোলাম। বর্ধমান থেকে নবাবহাট পেরিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর ফাগুপুরের কাছে দেখলাম কিছুক্ষন আগেই NH-19 -এ একটা ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনা হয়েছে। তারকেশ্বর থেকে বিহারগামী একটি বাস দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক কে ধাক্কা মারে এবং ঘটনাস্থলে ১০জনের মৃত্যু হয়। স্বাধীনতা দিবসের সুন্দর সকালে খুবই বেদনাদায়ক একটি ঘটনা।
মেনরোড বন্ধ থাকায় সার্ভিস রোড দিয়ে কিছুদূর গিয়ে আবার মেনরোড ধরলাম। আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। যদিও এখন শ্রাবন মাসের শেষের দিক কিন্তু আবহাওয়া অনেকটা শরৎকালের মতো। খন্ড ভাসমান মেঘের জন্য রাস্তার উপর আলো - ছায়ার খেলা উপভোগ করতে করতে এগিয়ে চললাম। গলসি পেরিয়ে পারাজ মোড় থেকে ডানদিকে পারাজ স্টেশনের দিকে কিছুদূর যাওয়ার পর রেলগেট পেরিয়ে এগিয়ে চললাম অভিরামপুর বাজারের দিকে। অভিরামপুর বাজার থেকে Google map দেখে ৫কিমি মতো যাওয়ার পর অবশেষে সকাল ৮:৩০-এ এসে পৌছালাম আজকের destination ভালকী মাচান।

অনেকদিন পর আবার জঙ্গলে এলাম। গত দেড়মাস প্রবল বর্ষণের পর জঙ্গলের সৌন্দর্য এখন অপরূপ। জঙ্গলের মাঝে অনেক জায়গাতেই দেখলাম জল দাঁড়িয়ে আছে। নীল আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে আর তার সাথে এই ফাঁকা জঙ্গলের মধ্যে মনোরম সকাল সব মিলিয়ে খুবই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
জঙ্গলের মাঝে পিচরাস্তা যা দেখলাম সকালে একেবারেই ফাঁকা কোনো লোক বা যান চলাচল নেই - শহরের কোলাহল থেকে দূরে এক নির্মল পরিবেশ। যদিও শীতকালে এখানে অনেক জনসমাগম হয় অনেকেই পিকনিক করতে আসে তখন এখানের পরিবেশ আর এতটা ভালো থাকে না।
জঙ্গলের মাঝে পিচরাস্তা দিয়ে কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর দেখতে পেলাম ডানদিকে ভালকী মাচানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান - একটি পুরাতন ভাঙা স্তম্ভের মতো টাওয়ার।

৩৫ ফুট উঁচু এই টাওয়ারটির চারিদিকে কোনও দেয়াল নেই এবং এর চার কোণে চারটি এল-আকৃতির কাঠামো রয়েছে।
কেন্দ্রে আরেকটি ইটের স্তম্ভ রয়েছে যার কেন্দ্রীয় উল্লম্ব গর্ত রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্তম্ভের গোড়ায় একটি গর্ত রয়েছে এবং উভয় পাশে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। কেন্দ্রের গর্তটি একটি লোহার গ্রিল দিয়ে আবৃত।
স্থানীয় লোককথা অনুসারে, এটি একটি উঁচু শিকারের মঞ্চ ছিল, যা স্থানীয় জমিদার ভালুক শিকারের জন্য ব্যবহার করতেন। এটা থেকেই এই জায়গার নাম হয় - ভালকী মাচান। ভালকী মাচান নামটির আক্ষরিক অর্থ হল ভালুক শিকারের জন্য ব্যবহৃত একটি উঁচু প্ল্যাটফর্ম।
কিন্তু ইতিহাসবিদদের গল্প সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুসারে, টাওয়ারটি Great Trigonometrical Survey (GTS)-এর অংশ ছিল। GTS প্রকল্পটি ১৮০০ সালে শুরু হয়েছিল এবং অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত ছিল। এটিকে বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে অসাধারণ কাজগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। GTS টাওয়ারের কাজ ছিল ভারতের সঠিক মানচিত্র তৈরী করা, পৃথিবীর বক্রতা নির্ধারণ করা ইত্যাদি। ভালকি মাচানের এই মাচানটি দেশের শেষ স্থায়ী GTS টাওয়ারগুলির মধ্যে একটি। ১৮৩১ থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত এই টাওয়ারটি ব্যবহৃত ছিল।
এই টাওয়ারের মাঝের স্তম্ভে যে ছোট গর্ত রয়েছে সেখান দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে নীলাভ আভার সৃষ্টি করেছে। আর নিচে মাটির উপর রয়েছে একটি বিশাল গর্ত যা দেখলাম লোহার গ্রিল ঢাকা রয়েছে।
মাচান দেখা শেষ করে এবার পাশে মোরাম রাস্তা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে যমুনা দিঘি নাম ২৫ হেক্টর একটি লেক রয়েছে। রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনে যমুনা দিঘি মাছ চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। যমুনা দিঘির চারপাশে খুব সুন্দর একটি বাগান রয়েছে। সব মিলিয়ে এই যমুনা দিঘির চারপাশ খুবই মনোমুগ্ধকর জায়গা। দিঘির চারপাশ একটু ঘুরে দিঘির পাশে একজায়গায় বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। এই যমুনা দিঘির পাশেই রয়েছে "অরণ্য সুন্দরী" রিসর্ট।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সময় এখন সকাল ৯:৩০। এবার বাড়ি ফিরতে হবে। ভালকী মাচান থেকে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। যে রাস্তা দিয়ে এসেছি ওই রাস্তা দিয়েই আবার ফিরে চললাম। ফাগুপুর যখন পেরোচ্ছি সেই সকালের মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনার কথা মনে পরে গেলো। রাস্তার ধারে দেখলাম পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলিতে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। স্কুলের বাচ্চা ছেলেমেয়েরা হাতে ছোট ছোট পতাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছে।
আজ গল্প এই পর্যন্তই। যারা আমার website-এ প্রথমবার গল্প পড়ছো, আমার এই গল্প টি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমার বাকি গল্প গুলো পড়তে ভুলো না। আমার গল্প ভালো লেগে থাকলে নীচে দেওয়া Share link থেকে বন্ধুদের share করো। খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি আবার এক travel story নিয়ে। Keep visiting my website...